‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ জামায়াতে ইসলামীকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতি–নির্ধারকদের একজন আব্দুর রাজ্জাক; তবে এই সিদ্ধান্তের কারণ তিনি প্রকাশ করেননি। এক দশকে প্রথম ঢাকায় পুলিশকে জানিয়ে প্রকাশ্যে জামায়াতের সমাবেশ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা জানান।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে শীর্ষনেতাদের দণ্ডিত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের পর থেকে ঢাকায় পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। নানা সময়ে দলটি ঝটিকা মিছিল বের করলেও নির্বিঘ্নে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। কর্মসূচি পালনে নেমে, এমনকি ঘরোয় সভা করতে গিয়েও গ্রেপ্তার হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে দুই যুগ ধরে জোটে থাকলেও এখন সেই জোটও নেই। যদিও প্রায় একই দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে তারা। এর মধ্যেই শনিবার পুলিশের অনুমতি নিয়ে জামায়াতের সমাবেশ করাকে ‘বিস্ময়কর’ বলছেন বিএনপির সঙ্গে এখন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। খবর বিডিনিউজের।
সচিবালয়ে গতকাল জার্মান দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফার্ডিনান্ড ফন ভেইহের সঙ্গে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাকের বৈঠকের পর সাংবাদিকরা তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে করা সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, এটা রাজনৈতিক ব্যাপার। রাজনৈতিক কারণে, দেখা যাক। এটা একটা পলিটিক্যাল ডিসিশন, এটি সময়ই আমাদের বলে দেবে।
রাজ্জাক বলেন, তারা (জামায়াত) রাজনৈতিক দল, হাই কোর্টের রায় ছিল সংবিধানের সঙ্গে তাদের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক, গ্রহণযোগ্য না। এই প্রেক্ষিতেও তাদের তো অনেক জনগণের সমর্থন আছে। এই পরিস্থিতির আলোকে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, আরও দেখবেন কী হয়? ‘রাজনীতিতে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়’ মন্তব্য করে তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক প্রতিকূলতার মাঝে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সুপরিকল্পিতভাবে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধংস করার জন্য, দেশটিকে পাকিস্তানের ধারায় নেওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে। এদেশে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া যায়নি, বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে আনা যায়নি। এমন পরিস্থিতি ছিল যে সামরিক স্বৈরাচাররা এরশাদের আমলে, জিয়ার আমলে এগুলো করেছে। তখন আমাদের পরিস্থিতির আলোকে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সেটিই আমি বলতে চেয়েছি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে এক প্রশ্নে রাজ্জাক বলেন, সুযোগ নেই কেন? পৃথিবীতে যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে তো ওই রকম কোনো ‘ই’ সৃষ্টি হয় নাই যে বিএনপির সাথে কোনো সংলাপ হবে।
বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা আন্দোলন করছে। আন্দোলন করতে করতে যখন তারা এঙাস্টেড হয়ে যাবে, তখন তারাই বলবে একটা কিছু করা দরকার। আমরা সাধারণত তাই করি। বিএনপির আন্দোলন নিয়ে সরকার চিন্তিত নয় দাবি করে রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন। গ্রাসরুট লেভেলে আওয়ামী লীগের যথেষ্ট ভিত্তি আছে। ইচ্ছা করলেই আন্দোলন করে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না। বিএনপি আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। বিদেশিরা তাদের যত রকম উসকানি দিক, সহযোগিতা করুক বা তারা যেটা প্রত্যাশা করছে বিদেশিরাও একটা পর্যায়ে গিয়ে বুঝবে ওইভাবে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব না। আমাদের ভুলভ্রান্তি যে নেই তা নয়। কাজেই এই দলকে ইচ্ছা করলেই ঠেলে দেওয়া কঠিন। বিদেশি কোনো শক্তি বা কেউ যদি আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায় এবং হস্তক্ষেপ করে আমি মনে করি না তারা সফল হতে পারবে। আমরা রাজনৈতিকভাবে সেটা মোকাবেলা করতে পারব।
বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় কূটনীতিকদের তৎপরতা নিয়ে তিনি বলেন, দৌড়ঝাঁপ আছে, সেটি করতেই পারে। আমি বলেছি তোমরা সাজেশন দাও।