জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি নিয়ে যে ‘সংকট’ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উদ্ভূত সমস্ত ‘সংকট এড়াতে’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ দেবে বলেও প্রত্যাশা রেখেছেন তিনি। গতকাল রোববার সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে মির্জা ফখরুল কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, এখানে একজন শহীদের পিতা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন যে, আমরা আশা করেছিলাম গণঅভ্যুত্থানের পরে অতিদ্রুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হবে, রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হবে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারব। বিষয়টা হচ্ছে যে, রাজনীতিটা অত সহজ পথ নয়, গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো থাকে না, এখানেও সমস্যা থাকবে, সেটাই রাজনীতি। কিন্তু এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। খবর বিডিনিউজের।
রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি–ভিন্নমত থাকবে, বহুমাত্রিক পথ থাকবে, কেউ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস করবে, কেউ আপনার ওয়েলফেয়ার স্টেটে বিশ্বাস করবে। সবগুলোকে মিলিয়ে সেই রকম একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করা হবে, অনেক আগেই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন।
রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিএনপির দেওয়া অতীতের ৩১ দফা সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১দফা দিয়েছেন, সেই দফার মধ্যে আজকে যে সংস্কারের প্রশ্নটা উঠেছে, সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো আসছে তার প্রত্যেকটি প্রস্তাব আমরা ২০২২ সালে দিয়েছি।
জুলাই আন্দোলনে শহিদের সংখ্যা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সেই বিষয়গুলো নিয়ে তর্ক–বিতর্ক করতে চাই না। আমার কতজন শহীদ হয়েছেন, আমার কতজন নিহত হয়েছেন, আমরা কত ত্যাগ স্বীকার করেছি, কারা কী কাজ করেছি এই বিতর্কে আমি যেতে চাই না। কারণ ওটা আমার কাছে মনে হয় স্বার্থপরতার একটা ব্যাপার আছে। আমার দায়িত্ব হচ্ছে এই জাতিকে আমাকে উপরে তুলতে হবে। যে প্রাণগুলো গেছে, যারা জীবন দিয়েছে তারা কিন্তু জীবন দিয়েছে ঘোষণা করেই দিয়েছে যে–আমরা ফ্যাসিস্টকে সরাবো, জাতিকে একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই।
সত্যিকার অর্থে একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ফখরুল। ‘আমরা মানুষ যেন সুস্থভাবে স্বাধীনভাবে কমফোর্টেবল ওয়েতে স্বস্তির সঙ্গে যেন চলাফেরা করতে পারে সেই ধরণের একটা রাষ্ট্র চাই।
ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ করেছি একটা স্বাধীন দেশের জন্য, সেই দেশের পুলিশ প্রশাসন যা আমার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করে, যাদের বেতন হয় আমাদের আমাদের প্রত্যেকের ট্যাক্সের টাকায় থেকে। তারা আজকে আমার ছেলেকে হত্যা করছে, পুড়িয়ে মারছে, কি নির্মম নৃশংস অমানবিক। এজন্য হাসিনাকে কোনোদিন ক্ষমা করা যাবে না, হাসিনা হচ্ছে মানবজাতির একটা কলঙ্ক, হাসিনা হচ্ছে মায়েদের একটা কলঙ্ক। আমাদের প্রথম কাজ হবে এদের বিচার করা।
জুলাই আন্দোলনে শহিদদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনকে কাজের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রেখেছেন ফখরুল। তিনি বলেন, আহত হয়েছে, চোখ হারিয়েছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তা না হলে ভবিষ্যতে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। সেজন্য গতকালও প্রস্তাব করেছি, আজকেও প্রস্তাব করছি, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে একটা ফান্ড রেইস করব যা মাধ্যমে এই পরিবারকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব।
মির্জা ফখরুল আশা করেন, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা তারা রক্ষা করবে। তিনি বলেন, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটা সরকার তৈরি করতে পারব। যে সরকার আমার এই শহিদদের মূল্যায়ন করবেন, তাদের মর্যাদা দেবেন, একই সঙ্গে যেজন্য সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবার সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।