রাজনীতিকীকরণ সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার উৎস : তথ্য উপদেষ্টা

| মঙ্গলবার , ৬ মে, ২০২৫ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে সংবাদমাধ্যমে যে ধরনের ‘রাজনীতিকীকরণ হয়েছে’, সেটিই মূলত সাংবাদিকদের ‘অধিকারহীনতার উৎস’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সমপ্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তার কথায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘটা হত্যা, গুম, খুনের জন্য ‘সম্মতি উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়েছে’।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডে ডিএফপির সভাকক্ষে ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যানিপীড়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে কথা বলছিলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। খবর বিডিনিউজের।

মাহফুজ বলেন, শেখ হাসিনার পৈশাচিকতার সম্মতি উৎপাদনের যন্ত্র ছিল গণমাধ্যম। এবং গণমাধ্যমের রাজনীতিকীকরণই মূলত সাংবাদিকদের শত্রু। সাংবাদিকদের এই কথাটা গুরুত্ব দিয়ে বোঝা উচিতসংবাদমাধ্যমগুলোর যে রাজনীতিকরণ হয়েছে, এটাই মূলত সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার উৎস। এই যে মানুষকে হত্যা করা, নির্বিচারে গুম, খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা এসব ঘটনা ঘটানোর জন্য সম্মতি উৎপাদনের জন্য গণমাধ্যমকে দরকার ছিল। এবং গণমাধ্যম তৈরি করা হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন পাওয়া সংবাদমাধ্যমগুলোকে তদন্তের আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কিভাবে ওই গণমাধ্যমগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, আমরা ওগুলোর খুব শিগগিরই তদন্ত করব। কখন, কীভাবে এদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং এই অনুমোদনের ভিত্তিতে এরা কিভাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং ভুয়া সাংবাদিক তৈরি করেছে।

পেশাদারিত্ব তৈরি করার ক্ষেত্রে পরামর্শ রেখে মাহফুজ বলেন, আপনি যদি একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা, মানসম্পন্ন এবং পেশাদারিত্ব যদি তৈরি করতে চান, আপনাকে ব্যাড অ্যাপলগুলো বাদ দিতে হবে। এবং গুড অ্যাপলগুলো বাদ দিতে হবে। পেশাদার পত্রিকাগুলোর জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবেও বলেও জানিয়েছেন মাহফুজ। তিনি বলেন, যাদের পত্রিকা বিক্রি হয়, তাদের জন্য সুযোগ বাড়াতে হবে। তাদের জন্য আমরা পত্রিকার সার্কুলেশনের ভিত্তিতে ডিএফপির যে সুবিধা আছে সেগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করব। বিজ্ঞাপনের হার বাড়াব। যাতে পজিটিভ মিডিয়া হবে। প্রফেশনাল মিডিয়া হবে।

সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাই না এই সরকারের পক্ষে আপনারা লেখেন। সরকারকে প্রশ্ন করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সরকারকে প্রশ্ন করলে সরকার আরও বেশি কাজ করে। কিন্তু পেশাদারিত্বে জায়গা থেকে প্রশ্ন করা এক জিনিস, কিন্তু সাংবাদিকতাটাকে একটা দলের আদর্শের প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে ব্যবহার করা আলাদা জিনিস। অবশ্যই এখানে মব ভায়োলেন্স হয়েছে এবং আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। কোনো সংবাদমাধ্যমে আজ পর্যন্ত কোনো আঘাত করতে দেওয়া হয় নাই এবং সামনেও করতে দেওয়া হবে না।

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হবে জানিয়ে মাহফুজ বলেন, ২৬৬টা মামলার কথা বলা হল। কিন্তু আমি শুধু জানতে চাই গত ১৫ বছরে কয়েক হাজার মামলা হল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, কয়জন সম্পাদক লিখেছেন? কয়টা সম্পাদকীয় বের হয়েছে, কয়টা রিপোর্ট বের হয়েছে, আমরা দেখব। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। হয়রানিমূলক মামলা হলে সেগুলো পর্যালোচনা করে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা।

মাহফুজ বলেন, বাংলাদেশে সরকারের যে অবস্থা, এখানে ভরকেন্দ্র একটা না, অনেকগুলো। অনেক রাজনৈতিক দল অনেক শক্তিশালী। এখন যে যেখানে পারছে, মামলা দিচ্ছে। আমরা বলছি, এভাবে যেনতেনভাবে মামলা যাতে না হয় এই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় চাঞ্চল্যকর শিউলি হত্যা মামলায় মা-ছেলে গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমেয়রের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সৌজন্য সাক্ষাৎ