রাজ কাঁকড়ায় সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নের স্বপ্ন

কক্সবাজারে কর্মশালা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ১৬ জুন, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ নামে পরিচিত নীল রক্তের সামুদ্রিক প্রাণী ‘রাজ কাঁকড়া’ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে দেশের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা। রক্তের ঔষধি গুণের কারণে প্রাণীটি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে ছয়-সাত দশক আগে গবেষণা শুরু হলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি রাজ কাঁকড়ার রক্তের দাম বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে অন্তত ১৫ লাখ টাকা। এ বিষয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ধারণা করা হয়, রাজ কাঁকড়া ডাইনোসর যুগেরও আগের। ঔষধি গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাণীটির এক গ্যালন রক্তের দাম ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। চিকিৎসা শাস্ত্রে রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত এনেছে যাদুকরী পরিবর্তন। মানুষের শরীরের দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এবং মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত অতুলনীয়। এছাড়া এর শরীরের পেছনে থাকা ছোট্ট লেজটি দিয়ে তৈরি করা হয় ক্যান্সারের ওষুধ। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে একেকটি রাজ কাঁকড়ার দাম অনেক বেশি বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
কঙবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রাণীটি ‘দিয় কিঁয়ারা’ বা ‘দৈত্য কাঁকড়া’ নামে পরিচিত। একটি নারী রাজ কাঁকড়া বছরে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত ডিম দেয়। এর মধ্যে কয়েক হাজার বেঁচে থাকে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। তবে মাত্র ২ যুগ আগেও কঙবাজার শহরসহ দেশের বিভিন্ন সমুদ্র উপকূলের জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে রাজ কাঁকড়া দেখা যেত। কিন্তু বিস্তীর্ণ উপকূল থেকে প্রাণীটি একেবারে হারিয়ে গেছে।
তবে বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে হারিয়ে গেলেও এখনো জেলার বিভিন্ন দ্বীপ ও ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদঘেরা কাদা-বালুকাময় অঞ্চলে প্রাণীটি টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএনের পর্যবেক্ষণেও বাংলাদেশে প্রাণীটির অবস্থান লাল তালিকায়।
জানা গেছে, এই আদি প্রাণীর জীবাশ্মের আত্মীয়রা অর্ডোভিশিয়ান পিরিয়ডের (৪৮৫.৪ মিলিয়ন থেকে ৪৪৩.৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে) হিসাবে স্বীকৃত। অর্থাৎ জুরাসিক পিরিয়ডের (২০১.৩ মিলিয়ন থেকে ১৪৫ মিলিয়ন বছর আগের) পূর্ববর্তী যুগের এই প্রাণীটি প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকা আদি প্রাণী।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র কঙবাজার কর্তৃক আয়োজিত ‘বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি (২০২০-২১) পর্যালোচনা ও গবেষণা প্রস্তাবনা (২০২১-২২) প্রণয়ন’ শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় মৎস্য বিজ্ঞানীরা দেশের ব্লু-ইকনোমি বা সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে রাজ কাঁকড়া নিয়ে গবেষণাসহ নতুন চারটি গবেষণা প্রকল্প প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি কর্মশালায় চলমান ২১টি গবেষণা প্রকল্পের অগ্রগতিও তুলে ধরা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার কঙবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. মো. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, সুনীল অর্থনীতি এবং এসডিজির লক্ষ্য পূরণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং মাঠ পর্যায়ে সফলতা বৃদ্ধির জন্য বেশি পরিমাণে প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে গবেষণার গুণগত মানের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএফআরআই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন পণ্য ও তাদের বাই প্রোডাক্ট বা উপজাত নিয়েও আমাদের গবেষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কোরাল মাছের কেজ কালচারসহ সমন্বিত মেরিকালচার প্রযুক্তির উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়া লাইভ ফিড গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের ফাইটোপ্লাংকটন ও জ্যুওপ্লাাংকটন আইসোলেশনও চাষ করা হচ্ছে। সমুদ্র থেকে এগুলো পৃথকীকরণ করে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে, যা পরবর্তীতে কঙবাজারের বিভিন্ন কাঁকড়া ও চিংড়ি হ্যাচারিগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে।
কঙবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র প্রধান ড. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শাহজাদা খসরু ও কঙবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বিপ্লব। কর্মশালায় বিজ্ঞানী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জেলা- উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা, চাষী, প্রিন্ট ও ইলেকট্‌্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অংশ নেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুলে দেয়া হলো বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড
পরবর্তী নিবন্ধনাসির ও অমি ৭ দিন রিমান্ডে