প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এবং কৃষক মোহাম্মদ ইউসুফ। তার জমির ধানগাছগুলো ভালোভাবেই বেড়ে উঠছিল। কিন্তু ধানের শীষগুলো সবুজ থেকে লালচে বর্ণ ধারণ করতে থাকে। অনেক ধানগাছ কুঁকড়ে বেঁকে যায়। প্রায় ১ হেক্টর জমির ধানগাছের এ রকম অবস্থা। সমস্যা দেখা দেওয়ার পর ইউসুফ জমিতে নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করার পরও কোনো উন্নতি হয়নি।
শুধু তার জমিতে নয়, ওই অঞ্চলের ফকিরাবিল, রাজারবিল, খামাইজ্জাবিল, ঘিমাহালি বিলসহ আশপাশের জমিগুলোর কৃষকের প্রায় ১৫ হেক্টর জমির ফসলের একই অবস্থা হয়েছে। কৃষক মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, তার জমিগুলোর মধ্যে যেখানে ব্রি ধান–২৮ লাগিয়েছেন সেগুলোতেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আশেপাশের অন্য কৃষকরাও ওই জাতের ধান লাগানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, দক্ষিণ রাজানগরের ওই বিলগুলো ছাড়াও বেতাগী, পোমরা, শিলক, পারুয়া, পদুয়া, রাজানগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে একই রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ভবিষ্যতে ফলন বিপর্যয় হয়ে বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দূর থেকে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। কিন্তু ক্ষেতের কাছাকাছি গেলেই ধানগাছের বাস্তব চিত্র চোখে ধরা দেয়। ক্ষেতের পর ক্ষেত ধানের শীষ লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। শীষ শক্ত হয়ে হেলে পড়ছে।
উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, ধানের এই রোগকে স্থানীয়ভাবে ঘাড়ভাঙা রোগ বলা হয়। ভালো নাম নেক ব্লাস্ট। এটি ধানের অন্যতম ধ্বংসাত্মক রোগ। দিনের বেলায় বাড়তি তাপমাত্রা থাকছে। রাতে গিয়ে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। হালকা কুয়াশা, মেঘলা আবহাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে এবং মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহারের ফলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ভয়ে অনেক কৃষক আগাম সতর্কতা হিসেবে ভালো ধানক্ষেতেও ওষুধ প্রয়োগ করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই খেতের ফসল ভালো করতে পারছেন না। এ রোগে ধান নয়, বোরো চাষিদের কপাল পুড়ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০% জমিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় শুধুমাত্র ব্রি ধান–২৮ জাতের ধানেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমরা শুরু থেকেই এই জাতের বীজ না লাগানোর জন্য বলে আসছিলাম। এটা ২০০৩–০৪ সালের দিকের জাত। কৃষকদের এটির পরিবর্তে একই ধরনের ব্রি ধান ৮৮ জাতের বীজ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম। শুধু রাঙ্গুনিয়ায় নয়, সারা দেশে এই জাতের বীজ আবাদ না করার জন্য আগে থেকেই বলা হচ্ছিল।
এরপরও যারা ব্রি ধান ২৮ লাগিয়েছেন তাদের জমিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমরা তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। তবে এটি টোটাল ফলনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে আশা করছি।