একদিকে কর্ণফুলী নদী, অন্যদিকে পাড়জুড়ে মাঠের পর মাঠ পানের বরজ। যেখানে ভোরের আলো ফুটতেই কেউ বরজ থেকে পান তুলছেন, কেউ করছেন পরিচর্যা। বৃষ্টির পানিতে পানের বরজগুলো এখন সেজেছে মনোরম সাজে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কদমতলী গ্রামে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে। সেখানে কথা হয় জাহাঙ্গীর আলম নামের এক পান চাষীর সাথে। তিনি বলেন, গুমাইবিলে ধান চাষের পাশাপাশি গেল কয়েক বছর ধরে এখানে পান চাষ করেছি। পান চাষে ধানের চাইতেও বেশি লাভ পাওয়া যায়। পান চাষ আমার সংসারের অভাব দূর করেছে।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় আদিকাল থেকেই পান চাষ করে আসছেন চাষীরা। বিশেষ করে কর্ণফুলী ও ইছামতী নদীর তীরজুড়ে সারি সারি পানের বরজ দেখা যায়। একবার লাগানোর পর বছরের পর বছর এর ফলন পাওয়া যায় বলে এই চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। পান চাষ করে অনেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই চাষে কৃষক আরও বেশি উদ্ধুদ্ধ হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
উপজেলা কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, রাঙ্গুনিয়ার ৫ ইউনিয়নে পান চাষ রয়েছে। যেখানে ২৬৪ জন কৃষক ৩৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছেন। যাঁদের কৃষিজমি নেই, তাঁরাও অন্যের জমি খাজনা হিসেবে নিয়ে পানের চাষ করছেন। এরমধ্যে উপজেলার মরিয়ম নগরে ১৩.৫৭ হেক্টর, পারুয়ায় ২.৪৮ হেক্টর, পদুয়ায় ৬.৮ হেক্টর, পৌরসভায় ৪.৬৫ হেক্টর এবং স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়ায় ৭.৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ রয়েছে। তবে কর্ণফুলী নদীর তীর ভাঙনের কারণে ১৫ হেক্টর পানের আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
মরিয়ম নগর ইউনিয়নের কৃষক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কদমতলী নদীর পাড়ে তার ৪০ শতক জমিতে পান চাষ রয়েছে। তার লাগানো পানের বরজ থেকে ৭–৮ বছর ধরে ফলন পাচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ তিনি আরও ৮ শতক জমিতে পানের বরজ করেছেন। এই আট শতকে শ্রমিক বাবদ ৩০ হাজার, বাঁশ ২০ হাজার, পানের গাছ ১০ হাজার এবং খাজনা বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে লাগানোর ২–৩ মাস পর ফলন এসেছে। ছয় মাসের মধ্যেই তার খরচ বাদ দিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে জানান। ফলন আসার পর প্রতি সপ্তাহে এক বার করে পান তুলা যায়। ভোরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বেপারীরা এসে মাঠ থেকেই পান নিয়ে যায় বলে তিনি জানান।
স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের পানচাষী আবুল হোসেন বলেন, ধানের চেয়ে পান চাষে লাভ বেশি। বছরে ৪০ শতক জমিতে দু’বার ধান চাষ করে খরচ বাদে ৫০–৭০ হাজার টাকা আয় করা যায়। কিন্তু বাজারে দাম থাকলে বছরে ওই ৪০ শতক জমির পান বিক্রি করে খরচ বাদে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। প্রতিটি পানগাছ থেকে ১০–১২ বছর পর্যন্ত পান পাওয়া যায়।
পৌরসভা এলাকার পানচাষি কৃষ্ণ কুমার দাশ বলেন, ধান কাটার পর আবার নতুন করে চাষের জন্য জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে নানা কাজ করতে হয়। এতে যেমন খরচ হয়, তেমন লাভ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে পান একবার চাষ করলে ১০–১২ বছর টানা বিক্রি করা যায়। এর মধ্যে শুধু ক্ষেত পরিচর্যার খরচ করতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, পান অর্থকরী ফসল। এটি চাষ করা বেশ লাভজনক। দীর্ঘ বছর ধরে রাঙ্গুনিয়ার শত শত কৃষক ধান ও অন্যান্য চাষের পাশাপাশি পানের চাষ করছেন। এতে লাভ বেশি। ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে এসব পান কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। এই ফসল চাষের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাই দিন দিন পানের চাষ বাড়ছে।