রাঙ্গুনিয়ায় গরুর বাজারে শ্বশুরকে কুপিয়ে মারল জামাই

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৩ জুন, ২০২৫ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় গরুর বাজারে শ্বশুরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে মেয়ের জামাই। গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার গোডাউন গরুর বাজারে কাপ্তাই সড়কের ওপর এ ঘটনা ঘটে। হত্যার পর পালানোর সময় হত্যাকারী জামাইকে ধরে ফেলে জনতা। হত্যার পর দেড় ঘণ্টা সড়কেই পড়ে ছিল নিহতের লাশ। ঘটনার পরদিন সকালে ঘাতক জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে নিহতের স্ত্রী।

নিহত শ্বশুরের নাম ওসমান গণি (৫২)। তিনি উপজেলার শিলক ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড রাজাপাড়া এলাকার লাল মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে হত্যাকারী জামায়ের নাম মোহাম্মদ হোসেন (৪০)। তিনি উপজেলার পূর্ব সরফভাটা ৮নং ওয়ার্ড আজলা বাপের বাড়ির মোহাম্মদ হাশেমের ছেলে।

ঘটনার দিন সরেজমিনে দেখা যায়, কাপ্তাই সড়কের পাশেই পড়ে ছিলো লাশ। স্থানীয়রা লাশটি ঘিরে রেখে ছবি তুলছিলেন। অন্যদিকে সিএনজি টেক্সির অফিসে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটক করে রেখেছে ঘাতক জামাইকে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ৭টার দিকে লাশটি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এ সময় নিহতের ছোট ভাই আবদুর রহিম জানান, শিলক রাবার ড্যাম এলাকায় গরুর খামার রয়েছে নিহত ওসমান গণির। তারা শুক্রবার সকালে তিনটি গরু বিক্রির জন্য গোডাউন বাজারে আনেন। এরমধ্যে দুটি গরু বিক্রি হয়ে যায়। আরেকটা গরু বিক্রির সময় ঘাতক জামাই এসে প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। বিকাল ৫টার পর থেকে ৬টা পর্যন্ত লাশটি সড়কেই পড়ে ছিলো বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ঘটনাস্থলে বিলাপ করে কান্না করছিলেন নিহতের মেয়ে ও ঘাতকের স্ত্রী রিনা আক্তার (২২)। তিনি জানান, ২০১৯ সালে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সংসারে ৬ ও ৩ বছর বয়সী দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতন সইতে না পেরে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি বাপের বাড়ি চলে যায়। এরপর জীবিকার তাগিদে ৯ এপ্রিল গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। কোরবানির ছুটিতে বেতন ভাতা হাতে ঈদ করার জন্য বাড়ি আসার পথে শুনলেন তার জামাইয়ের হাতেই খুন হলো তার বাবা।

জানতে চাইলে বাজারের অন্যতম ইজারাদার মো. লিয়াকত আলীসহ উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুন্দরভাবেই বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিলো। এরমধ্যে হঠাৎ একজন গরু বিক্রি করতে আসা ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে। পালানোর সময় ধাওয়া করে সবাই মিলে হত্যাকারীকে ধরে ফেলে। এরপর সিএনজি টেঙি অফিসে বসালে হত্যাকারী জানায়, শ্বশুরকে মারার জন্য সে সারাদিন ধরে খুঁজছিলো। পরে গোডাউন বাজারে এসেছে শুনে দা নিয়ে সেখানে আসেন। দেখতে পেয়ে প্রথমে এটি একটি পাকা ওয়ালের সাথে শান দেন। পরে অতর্কিত অবস্থায় শ্বশুরকে মাথায় ক্রমাগত আঘাত করে কুপিয়ে হত্যা করে পালানোর চেষ্টা চালায়।

কেন হত্যা করেছে জানতে চাইলে ঘাতক হোসেন জানায়, তিনি দিনমজুর। তুচ্ছ কারণে ঝগড়া করে তার স্ত্রী স্বর্ণ নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। যাওয়ার সময় দুই সন্তানের একজনকেও সাথে নিয়ে যায়। এই নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চালায়। কিন্তু সমাধান হয়নি। গত বৃহস্পতিবার শ্বশুর বাড়িতে ছেলেকে দেখতে গেলে দেখতে না দিয়ে উল্টো তাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করে। তাই তাকে মারার আগেই তিনি শ্বশুরকে মেরেছেন বলে জানান।

নিহতের মেয়ে ঘাতক হোসেন মিথ্যে বলছেন দাবি করে জানান, হোসেন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শ্বশুরকে হত্যা করেছে। হোসেনের ঘরে তাদের একটি সন্তান এখনো রয়েছে। নিহতের মেয়ে তার সন্তানকে তার কাছে এনে দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং হত্যাকারী জামাইয়ের ফাঁসির দাবি জানান।

রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই সুমন কবির মৃধা জানান, লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকারী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬