সাম্প্রতিক বন্যায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটির গ্রামীণ সড়কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার দশ উপজেলার ৪ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের মধ্যে ৫২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যা ও ভারী বৃষ্টিতে। সবচেয়ে বেশি গ্রামীণ সড়কের ক্ষতি হয়েছে জেলার বাঘাইছড়ি ও কাউখালীতে। ৫২ কিলোমিটার সড়ক ও নয়টি কালভার্টসহ অন্যান্য ক্ষতি মেরামতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার প্রাথমিক প্রাক্কলন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এদিকে, টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙামাটি–চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙামাটি–খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়ক, রাঙামাটি–বান্দরবান আঞ্চলিক সড়ক, বাঙ্গালহালিয়া–রাজস্থলী সড়ক, বগাছড়ি–নানিয়ারচর সড়ক মোট পাঁচটি সড়কে পাহাড় ও ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে রিটেইনিং ওয়ালের পাশে এপ্রোচ ধসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত ও সড়ক টেকসইকরণে রক্ষাপ্রদ কাজবাবদ প্রায় নয় কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরি করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার দশ উপজেলায় ৩৫টি স্থানে গ্রামীণ সড়কের খানাখন্দ, গর্ত, পেভমেন্ট (মূল সড়ক), সোন্ডার (মূল সড়কের পাশে পাঁকা অংশ), সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কালভার্ট ভাঙন কবলিত হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থানে ব্রিজের এপ্রোচ, কার্পেটিং নষ্টসহ সড়কের অংশ ভেঙে পড়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙা সড়ক মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। কিছু জায়গায় ভাঙন রোধে সায়মিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙন কবলিত সড়ক সংস্কারে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন তালিকা পাঠিয়েছে এলজিইডি রাঙামাটি জেলা কার্যালয়। প্রতিবেদনে টেকসইভাবে সড়ক মেরামত গাইড ওয়াল নির্মাণ, সড়কের পাশে পাইলিংসহ সড়কের সোল্ডার মেরামত প্রয়োজন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এলজিইডি রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি আজাদীকে বলেন, বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫২ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কসহ বিভিন্ন অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঘাইছড়ি ও কাউখালীতে। আমরা ইতিমধ্যে প্রধান কার্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন দিয়েছি। ৩৫টি স্থান ও ৫২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত ও টেইসইকরণে ৫০ লাখ টাকার প্রাথমিক প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙামাটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সওজের তত্ত্বাবধানে থাকা রাঙামাটির পাঁচটি সড়কের মধ্যে সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে ১৩টি স্থানে পাহাড়ি ছড়ার প্রবল স্রোতে সড়ক বাঁধ, সোল্ডার, পেভমেন্টসহ সড়কটি ধসে দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। রাঙামাটি–খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কের এক অংশে ২০০ মিটার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বিটুমিনসহ পেভমেন্ট সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কের রক্ষাপ্রদ কাজে স্বল্প মেয়াদি ৩ কোটি ৯৩ লাখ ও দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় প্রয়োজন সওজের।
সওজ রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা আজাদীকে বলেন, রাঙামাটি–চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কসহ জেলার পাঁচটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ছড়ার প্রবল স্রোতের ফলে সড়ক বাধ, পেভমেন্ট ও সোল্ডার ধসে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সড়কের পাশে এল ড্রেন ও আউটলেট ড্রেন নির্মাণ, আরসিসি রিটেইটিং ওয়াল, পটোলস রিপেয়ারসহ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের রক্ষাপ্রদ কাজ করতে প্রায় ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। রক্ষাপ্রদ কাজ করা হলে সড়কগুলো পূর্ণ টেকসই হয়ে উঠবে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।