রাঙামাটিতে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে রাঙামাটি জেলা শহরের সার্ভার স্টেশন এলাকায় অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটি ভাঙতে শুরু করে ‘রাঙামাটির ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতা’।
এদিন বিকেল ৩টায় ভেদভেদী বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে সার্ভার স্টেশনের সামনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে অবস্থান নেয় একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে বিকেল ৫টা থেকে ভাস্কর্য ভাঙা শুরু হয়। প্রথম দিকে লোহার বড় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙলেও পরে যোগ করা হয়েছে ড্রিল মেশিন। শুক্রবার রাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভাঙার কাজ চলছে।
এর আগে, গত বুধবার দুপুরে রাঙামাটি জেলা শহরে ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান করে ভাস্কর্য ভাঙার আলটিমেটাম দেয় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা’। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাস্কর্য ভাঙতে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের আলটিমেটাম দেয়া হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর ভাস্কর্য ভাঙার কর্মসূচি ঘোষণা করে। মূলত ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতা’র ব্যানারে ভাঙা শুরু করলেও সেখানে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়েছে।
‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র–জনতা, রাঙামাটির’ সংগঠক ও ছাত্র অধিকার পরিষদ রাঙামাটি জেলার আহ্বায়ক মো. ওয়াহিদুজ্জামান রোমান জানান, আমরা আশা করছি আজকে (শুক্রবার) রাতের মধ্যে ভাঙার কাজ শেষ হয়ে যাবে। এদিকে, ভাস্কর্যটি দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। জানতে চাইলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, ভাস্কর্যটি ভাঙার খবর পেয়েছি। তবে কারা ভাঙতেছে সেটি জানি না।
এ ব্যাপারে জানতে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহেদ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানায়। একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেনকেও।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর ২০১২ সালে রাঙামাটি জেলা শহরের ভেদভেদী সার্ভার এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ২০১২ সাল থেকে প্রায় ২০২০ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে ভাস্কর্যটির নির্মাণ করা হলেও এখনো কিছু কাজ অসম্পন্ন রয়ে গেছে। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই ভাস্কর্য নির্মাণে নকশাগত ত্রুটি ও অনিয়মের অভিযোগও উঠে। ভাস্কর্য নির্মাণকাজে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর স্বামী আনোয়ার হোসেন।