রাঙামাটিতে এক প্রকৌশলী সামলাচ্ছেন ৩ উপজেলা!

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শুক্রবার , ১৩ জুন, ২০২৫ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

দেশের সমতলের জেলাগুলোর চেয়ে পশ্চাৎপদ অঞ্চল বলা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামকে। শিক্ষা, চিকিৎসা, অবকাঠামোসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিক থেকে এখনো পিছিয়ে রয়েছে তিন পার্বত্য জেলার প্রান্তিক এলাকাসমূহ। সারাদেশের মতো তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত জনপদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, গ্রামীণ সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু এখন গ্রামশহরের উন্নয়নের প্রতিষ্ঠান এলজিইডিই রয়েছে সংকটে। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানটির রাঙামাটিতে ১০ উপজেলাসহ জেলা নির্বাহী কার্যালয়েও সংকট পড়েছে দক্ষ জনবলের। একজন উপজেলা প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করছেন তিন উপজেলার।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটি জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির দশ উপজেলার মধ্যে চার উপজেলাতেই উপজেলা প্রকৌশলীর গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য রয়েছে। চারটি উপজেলার মধ্যে নানিয়ারচর ও জুরাছড়ি উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী। কাউখালী ও বরকল উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন কাপ্তাই উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম চৌধুরী।

এলজিইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, দশ উপজেলায় ৩ জন করে মোট ৩০ জন উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োজিত থাকার কথা থাকলেও সেক্ষেত্রে রয়েছেন মাত্র ৫ জন। এরমধ্যে কাপ্তাই, কাউখালী, রাঙামাটি সদর, জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় একজন করে উপসহকারী প্রকৌশলী থাকলেও বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, নানিয়ারচর, লংগদু ও বরকল উপজেলায় উপসহকারী প্রকৌশলীর পদ শূন্য। বাকিগুলো চলছে সার্ভেয়ারদের দিয়েই! এরমধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলীর পদ দুইটি করে চারটি থাকলেও একজন সহকারী প্রকৌশলী ও একজন উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োজিত রয়েছেন। সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীর পদে মো. আনোয়ার পারভেজ নামে একজন নিয়োজিত থাকলেও গত ১৮ মে জুরাছড়ি উপজেলায় প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি অসুস্থ (হিটস্ট্রোক) হয়ে মারা যান।

এলজিইডির প্রকৌশলীরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রান্তিক পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার, ব্রিজকালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির উপজেলা পর্যায়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পর্যাপ্ত জনবলের সংকট রয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় একজন সার্ভেয়ারই কেবল নিয়োজিত আছেন। উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত আরেক উপজেলা প্রকৌশলী। মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে বিস্তৃত এলজিইডির জনবল সংকটের প্রভাব পড়ছে ভৌত কার্যক্রমেও। এতে করে ঠিকাদাররাও কাজে নয়ছয়ের সুযোগ কষেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, একজন ব্যক্তির পক্ষে একই সঙ্গে তিনচারটি কাজ একসঙ্গে করা একদম কঠিন। এতে করে অতিরিক্ত কাজের কারণে মানসিক ও শারীরিক চাপ বাড়ে। আমাদের কখনো কখনো এত বেশি কাজ থাকে, পর্যাপ্ত ঘুমানোর সুযোগও থাকে না।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি আজাদীকে বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষত কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকবলের অভাবে ঠিকাদারদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন কাজ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ছে। স্বল্প জনবল দিয়ে কাজ আদায় করতে গিয়ে বর্তমান জনবলের ওপর অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে। আমরা আশা করছি, অতি শিগগিরই কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউনূস-তারেকের বৈঠকের আগে লন্ডনে খসরু
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে শিকলবাহার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরকে সংবর্ধনা