মাত্র আট হাজার টাকার জন্য বন্ধুকে ছুরিকাঘাতে হত্যাকারী সেই জসিম উদ্দিন অবশেষে ধরা পড়েছেন। একই সাথে ধরা পড়েছেন মামলার তিন নম্বর আসামি জসিমের পুত্র মোহাম্মদ রাহাত। খুন করার পর বাবা–ছেলে পালিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার দুদিন পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছোরাও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত হোসেন মান্নার স্ত্রী খালেদা আক্তার বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এক নম্বর আসামি জসিম এবং তিন নম্বর আসামি তার ছেলে রাহাত। জসিম নগরীর সরাইপাড়া ইউনিট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জসিম জানান, রাগের মাথায় আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। এ ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না। ঘটনার পর থেকে আমার অনুতাপ হচ্ছে। কোরবানির ঈদে একত্রে কোরবানি দিয়েছিলাম। একই সাথে মহিউদ্দিন বাচ্চু ভাইয়ের নির্বাচনে কাজ করেছিলাম। একই ক্যাম্পে দায়িত্বরত ছিলাম। আমাদের উভয়ের কাছে এই টাকা কিছুই না। তবুও ঘটনা তো ঘটে গেছে।
গতকাল বিকালে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ–পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই জসিম ও তার ছেলে রাহাত পালিয়ে কিশোরগঞ্জে চলে যায়। ভৈরবে এক আত্মীয়ের বাসায় তারা আত্মগোপনে ছিল। সেখান থেকে দেশের বাইরে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা ছিল তাদের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এসব তথ্য পেয়েছি। তাদের তথ্যে হত্যাকাণ্ড যেখানে হয়েছে তার পাশে ড্রেন থেকে দুটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।
পাহাড়তলী থানা পুলিশ জানায়, সরাইপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জসিমকে চড় মারেন হোসেন মান্না। এ নিয়ে থানায় অভিযোগের পাশাপাশি আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। কয়েকদিন আগে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতা করে দেন। রোববার সকালে পুলিশের একটি দল জসিমের দায়ের করা মামলার তদন্তে হোসেন মান্নার বাড়িতে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এ সময় হোসেন মান্নার ছেলে অমিত বাড়ি থেকে ছুরি নিয়ে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জসিমও তার বাড়ি থেকে ছুরি নিয়ে আসে। হাতাহাতির এক পর্যায়ে মান্নাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন জসিম। বাবাকে বাঁচাতে এসে গুরুতর আহত হন তার ছেলে অমিত। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় বাবা–ছেলেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হোসেন মান্নাকে মৃত ঘোষণা করেন।