এক রাখাল ঘাস কাটছে। একটা শিয়াল দেখে বললো, ভাই এর চেয়েও ভালো ভালো ঘাসের আইল আছে ; তুমি যাবে?। রাখাল রাজি হয়ে সেখানে যেতে। সেখানে গিয়ে শিয়ালের সাথে গল্প করতে করতে অনেক ঘাস কেটে ফেললো। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। বাড়ি ফেরার সময় রাখাল, শিয়ালকে তার বাড়িতে দাওয়াত না করে পারলো না।
রাখালের মাথায় বড় এক বোঝা দেখে তার মা অবাক হয়ে গেলো, কি রে এত ঘাস কোথায় পেলি?
রাখাল সবকথা খুলে বললো মাকে।
কিন্তু রাখালের মা, শিয়ালের সাথে বন্ধুত্ব করাকে মোটেই পছন্দ করলো না। বললো, তুই শিয়ালকে ভালো করে না চিনে না বুঝে তাকে বন্ধু বানালি কেন? আমাদের বাড়ির ভুলুই তো তোর বন্ধু। ডাক দিলেই কেমন ছুটে আসে কাছে।
রাখাল একটু রাগস্বরেই মাকে বললো, কি বললে! ভুলু আমার ভালো বন্ধু? ওকে শুধু শুধু আমাদের খেতে–পরতে দিতে হয়। ও কোন কাজে আসে না আমাদের। ওকে দিয়ে কিছু হবে না! শিয়ালই আমার বন্ধু।
মা তখন বললো, তাই বলে ভুলুকে তুই ভুলে যাবি?
হুম। ওকে বাড়ি থেকে এক্ষুণি তাড়িয়ে দিতে হবে। একথা বলে রাখাল গরুকে ঘাস দিতে চলে গেলো।
তারপর গুটিগুটি পায়ে ভুলু রাখালের মায়ের কাছে আসলো। চোখ দিয়ে তার অশ্রু ঝরছে । রাখালের সবকথা আড়াল থেকে সে শুনে খুব কষ্ট পেয়েছে।
রাখালের মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কিরে তুই কাঁদছিস কেন ভুলু?
ও কিছু না মা – এই কথা বলে আরও কাঁদতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই বিষয়টি রাখালের মাকে বললো না। কত জোর করা হলো, তা–ও বললো না।
পরদিন দুপুরবেলা। শিয়াল মিষ্টির হাঁড়ি রাখালের বাড়িতে বেড়াতে এলো। রাখাল তাকে মন ভুলানো আপ্যায়ন করালো। ততক্ষণ ভুলু পাশের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলো। তাকে দেখলে শিয়াল এ বাড়িতে পা রাখবে না। এজন্য রাখাল ভুলুকে আগে–ভাগেই সরিয়ে রেখেছিলো। শিয়াল ও কুকুরের মধ্যে যে চিরদিনের ঘোর শত্রুতা।
খাওয়া–দাওয়া শেষ করে জর্দা পুরা একটা পান মুখে দিলো শিয়াল। তারপার রাখালের বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। হঠাৎ চোখে পড়লো তার, খুব সুন্দর একটা মুরগীর খোপ। শিয়াল তো বড্ড খুশি হলো দেখে। চারিপাশটা দেখে নিলো একবার। তারপর মনে মনে ঠিক করলো, আমি এমনটাই তো চাচ্ছি। আজ রাতেই তাহলে হবে। খুব মজা করে খাবো বন্ধুর মুরগী, হা! হা….!। শিয়ালের এই বিশ্রী পরিকল্পনাকে স্পষ্ট বুঝে ফেললো পাশেই লুকিয়ে থাকা ভুলু।
গভীর রাত। কদম গাছের মাথায় গোলগাল বাঁটির মত একটা চাঁদ উঠেছে। নিরিবিলি জোসনা ঝরছে চারিদিক। সবাই ঘুমন্ত। সুযোগটা কাজে লাগাতে চাই শিয়াল। এদিক–ওদিক তাকিয়ে চলে গেলো মুরগীর খোপের কাছে। দরজাটা আস্তে আস্তে খুলতেই কক কক করে উঠলো মুরগীরা। এতক্ষণে ভুলু তার দলবল নিয়ে খোপের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। কোথায় আর যাবে শিয়াল, আটকা পড়ে গেলো মুহূর্তে। ভুলুরা ঘেউ ঘেউ করে উঠলো শিয়ালের উপর। শব্দ শুনে রাখাল ও তার মাও ঘুম থেকে জেগে উঠলো। তাড়াতাড়ি ছুটে গেলো সেখানে। গিয়ে দেখতে পায় খোপের চারিপাশটা ভুলুরা ঘিরে রেখেছে। মাঝখানে শিয়াল ও মুরগীর খোপ। ভুলু রাখালকে দেখে বলল, এই যে তোমার শিয়াল বন্ধু। খুব উপকারী বন্ধু তোমার! মুরগী খেতে এসেছিলো। আমি আমার দলবল নিয়ে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছি। এখন বিচারের পালা তোমার হাতে।
রাখাল রাগান্বিত হয়ে শিয়ালকে বলল, ভুলু যা বলেছে তা কি ঠিক? শিয়ালের সত্যকথা বলা ছড়া আর কোন উপায় নেই। মাথাটা নিচু জানালো, হুম। ভুলু যা বলেছে তা সত্য। আমি মুরগী খাওয়ার লোভেই তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম মাত্র।
রাখালের মা শিয়ালের উপর খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। বলল, সবার সামনে এই দুষ্টু শিয়ালের বিচার করতে হবে। কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই, শিয়াল বড় এক লম্ফ দিয়েই দোঁড়ে পালালো। সবাই ধর! ধর! বলে পিছন ছুটলো। কিন্তু শিয়ালকে আর তারা ধরতে পারলো না। রাখাল তার ভুল বুঝতে পেরেছে। ভুলুর কাছে গিয়ে বললো– আমাকে ক্ষমা করে দাও বন্ধু! তুমিই আমার উপকারী বন্ধু। ভুলু সাথে সাথে রাখালকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।