ঢাকসু, জাকসু, চাকসুর পর এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও (রাকসু) একচ্ছত্র জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবির। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৩টি পদের ২০ পদেই জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯০১ জন। এতে ভোট পড়েছে ২০ হাজার ১৮৭টি। অর্থাৎ ৬৯.৮৩ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসু) নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’র মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়েছেন। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ নুর উদ্দিন আবীর পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৩ ভোট। ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান পেয়েছেন ১ হাজার ৬২১ ভোট। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মার। আম্মারের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির সমর্থিত প্যানেলের ফাহিম রেজা। আম্মার পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট এবং ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫৭২৯ ভোট। ছাত্রদল প্যানেলের নাফিউল জীবন পেয়েছেন ১ হাজার ৩২৮ ভোট। এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’র এসএম সালমান সাব্বির। তিনি ৬ হাজার ৯৭১ ভোট পেয়েছেন। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী জাহিন বিশ্বাস এষা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪১ ভোট।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে এই ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম। ২৩টি পদের ২০টিতেই জয়লাভ করেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সদস্যরা। অন্য তিনটির একটিতে জিএস হিসেবে ‘আধিপত্যবাদবিরোধী ঐক্য’র সালাউদ্দিন আম্মার, ছাত্রদল মনোনীত ক্রীড়া সম্পাদক নার্গিস এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ তোফা নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়াও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত পাঁচ সদস্য হলেন– সালাউদ্দিন আম্মার, মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ফাহিম রেজা, আকিল বিন তালেব ও সালমান সাব্বির। সিনেটে আম্মার ১২ হাজার ৮৩৩ ভোট, মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ৯ হাজার ৪৪৬ ভোট, ফাহিম রেজা ৮ হাজার ২০৫ ভোট, আকিল বিন তালেব ৫ হাজার ৭০৭ ও সালমান সাব্বির ৪ হাজার ৬৯০ ভোট পেয়েছেন। অন্য পদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হলেন– ছাত্রদল প্যানেলের একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি ক্রীড়া সম্পাদক পদে নার্গিস খাতুন, সাহিত্য ও বিতর্ক সম্পাদক পদে ইমরান মিয়া লস্কর, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে মো. মুজাহিদুল ইসলাম, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে জায়িদ হাসান জোহা, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মহিলা সম্পাদক পদে সাইয়্যিদা হাফসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে তোফায়েল আহমেদ তোফা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নাজমুস সাকিব। এ ছাড়াও পদগুলো সহকারী পদের মধ্যে–সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক পদে আবু সাঈদ মুহাম্মদ নুন, সাহিত্য ও বিতর্ক সহকারী সম্পাদক পদে মো. নয়ন হোসেন, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আসাদুল্লা, সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মো. রাকিবুল ইসলাম, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে মাসুমা ইসরাত মুমু, সহকারী মহিলা সম্পাদক পদে সামিয়া জাহান, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মুজাহিদুল ইসলাম সাঈম, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সিফাত আবু সালেহ নির্বাচিত হয়েছেন।
রাকসুতে কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে রয়েছেন মো. দ্বীপ মাহবুব, মো. ইমিজয়াউল হক কামালি, সুজন চন্দ্র, এবিএম খালেদ ও তামান্না আক্তার। নির্বাচনের দিন দুপুরে শিবির ও ছাত্রদল প্যানেলের সদস্যরা পাল্টাপাল্টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলেও ফল প্রকাশের পর ফলাফল মেনে নিয়েছেন।
ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর ও জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, এই নির্বাচন ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সৌহার্দ্য ও অংশগ্রহণের প্রতীক। বিজয়ী সকল প্রার্থীদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা। আমরা বিশ্বাস করি, মতের পার্থক্য থাকলেও আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন, একটি নিরাপদ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শিক্ষার্থী–বান্ধব আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠন। জাহিন বিশ্বাস এষা লিখেন, শিক্ষার্থীদের রায়ই চূড়ান্ত। সকলের এত বেশি ভালোবাসা পেয়েছি যা অকল্পনীয়।
বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। নয়টি একাডেমিক ভবনের ১৭টি কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে চলে ভোটগ্রহণ। এরপর কড়া নিরাপত্তায় ব্যালট বাঙগুলো সিলগালা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নেওয়া হয়। রাত আটটার দিকে শুরু হয় ভোট গণনা। হল প্রাধ্যক্ষ, রিটার্নিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে একের পর এক ব্যালট বাঙ খোলা হয়। প্রথমে মন্নুজান হলের ফল প্রকাশিত হয়। এরপর একের পর এক আবাসিক হলগুলোর ফল প্রকাশ হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মোছা. নার্গিস খাতুন। তিনিই ছাত্রদল প্যানেল থেকে একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী। তিনি জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৪ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলেন নার্গিস। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ছাড়াও অনূর্ধ্ব–১৪, অনূর্ধ্ব–১৬, অনূর্ধ্ব–১৭ ও অনূর্ধ্ব–১৯ জাতীয় নারী দলের হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।
নির্বাচনে জয়লাভ করে তিনি বলেন, রাকসুতে আমি ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। এটা আমার জন্য গর্বের, সম্মানের। এখানে শুধু আমি জয়ী হইনি, জয়ী হয়েছেন আমাকে ভোট দেওয়া প্রত্যেকটি ভোটার, জয়ী হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যারা দলবল নির্বিশেষে যোগ্যতার মূল্যায়ন করেছেন।