হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। রোববার দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টারে রাইসির সঙ্গে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সবাই নিহত হন। গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্টের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। খবর বাংলানিউজের।
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এ ঘটনায় তারা জড়িত ছিলেন না। ইব্রাহিম রাইসি তার কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও জানা যায়। মৃত্যুকালে রাইসির বয়স ছিল ৬৩।
১৯৮৮ সালে কয়েক হাজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাইসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে তিনি ইরানের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের দ্বন্দ্ব কতটা, কিছুদিন আগেও তা দেখা যায়। সিরিয়ায় তেহরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েল হামলা চালানোর পর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে ইরান। পরে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র–ড্রোন হামলা চালায়। রাইসির বিতর্কিত শাসনামল এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ইরানের দেশীয় শত্রু কিংবা ইসরায়েলের মতো বিদেশি শত্রুদের এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইসরায়েলের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা : ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক ইরানির অনুমান, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত থাকতে পারে। ইকোনোমিস্টের এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে। দামেস্কে ইসরায়েলের হামলায় ইরানি জেনারেলের প্রাণহানি, পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ সাম্প্রতিক উত্তেজনা বিবেচনায় এ অনুমান গতি পায়। ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বেশ পরিচিত নাম, যদিও সংস্থাটি ইরানের রাষ্ট্রপ্রধানকে কখনো হামলার লক্ষ্যবস্তু করেনি।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য ইসরায়েলি সম্পৃক্ততার তত্ত্বকে অসম্ভাব্য বলে মনে করেন। সাধারণত শীর্ষ কোনো নেতাকে হত্যার চেয়ে ইসরায়েলের কৌশলগত নজর বেশি থাকে সামরিক বাহিনী ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করার জোরালো কারণ রয়েছে। দেশটি কখনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা পর্যন্ত যায়নি। এমন ঘটনা হলে ইরানের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।
এ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াবে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে থাকা ইরানের প্রঙি–নেটওয়ার্ক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। ইরানের নেতৃত্বে যেকোনো অস্থিতিশীলতা সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোকে উসকানি দিতে পারে, সম্ভাব্য বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।