প্রয়াণ দিবসে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের দুটি ছবি সামনে এনে তাকে স্মরণ করেছেন তার নাতনি অভিনেত্রী রাইমা সেন। ইনস্টাগ্রামে একটি পারিবারিক গ্রুপ ছবি পোস্ট করে রাইমা ক্যাপশনে লিখেছেন, তিনি আছেন সবার স্মৃতিতে, হৃদয়ে। খবর বিডিনিউজের।
ছবিটি কারো জন্মদিনের আনুষ্ঠানে তোলা। সেখানে শিশু বয়সের রাইম ও রিয়া সেন, তাদের বাবা মা এবং ছবির ঠিক মাঝে একটু বেশি বয়সের সুচিত্রা সেনকে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ছবিতে পোষ্যর সঙ্গে সুচিত্রা। দিদিমাকে ক্যাপশনে ‘আম্মা’ সম্বোধন করেছেন রাইমা। ২০১৪ সালের এই দিনে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুচিত্রা। এই মহানায়িকার মৃত্যুর সঙ্গে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের এক সোনালী অধ্যায়ের অবসান ঘটে।
১৯৭৮ থেকে ২০১৪ প্রায় তিনটি যুগ কোন অভিমানে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন বাংলাদেশের মেয়ে সুচিত্রা, শেষ পর্যন্ত তা অজানাই থেকে গেছে। এ নিয়ে জল্পনা যতই হোক, নিজেকে আড়ালে রেখে মহানায়িকা নিজের পর্দার ছবিটিই দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী করে গেছেন। চলচ্চিত্রে সুচিত্রার শুরুটা হয়েছিল ১৯৫২ সালে, ‘শেষ কোথায়’ সিনেমার মধ্য দিয়ে, যদিও সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। পরের বছর উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমাই ‘সুপারহিট’। ৩১টি সিনেমায় জুটি বেঁধেছিলেন তারা।
১৯৫৫ সালে বিমল রায়ের পরিচালনায় হিন্দি ‘দেবদাস’ সিনেমায় দীলিপ কুমারের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান সুচিত্রা। ‘পার্বতী’ চরিত্রে তার অভিনয়ে বিমোহিত হয় দর্শক। এ সিনেমা তাকে এনে দেয় জাতীয় পুরস্কার।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুচিত্রাকে। একে একে অভিনয় করেন শাপমোচন, সাগরিকা, পথে হলো দেরি, দীপ জ্বেলে যাই, সবার উপরে, সাত পাকে বাঁধা, দত্তা, গৃহদাহ, রাজলক্ষ্মী–শ্রীকান্তর মত দর্শকপ্রিয় সব সিনেমায়।
চলচ্চিত্রে অধিকাংশ সময় সুচিত্রার সহঅভিনেতা ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম–সুচিত্রা জুটি ছাড়া সে সময় কোনো সিনেমা ‘হিট’ হবে, এটা ভাবা নির্মাতাদের জন্য কঠিন হতো। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে এসে ‘আঁধি’ সিনেমায় রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান সুচিত্রা।
‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ১৯৬৩ সালে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পান এ নায়িকা। ভারতীয় কোনো অভিনেত্রীর জন্য সেটিই ছিল বড় মাপের প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার। তিনি ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার পান ১৯৭২ সালে; ২০১২ সালে পান পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার বঙ্গবিভূষণ। দুই যুগের অভিনয় জীবনে বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে ৬০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন সুচিত্রা।
তার অন্তরালের জীবন নিয়েও কৌতূহলের অন্ত ছিল না। ২০০৫ সালে সুচিত্রাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে দিল্লি যেতে রাজি হননি তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বেলভিউ হাসপাতালে তার কক্ষটিও ছিল কঠোর গোপনীয়তার ঘেরাটোপের মধ্যে।