রমজানে যানজট রোধে প্রদত্ত নির্দেশনার বাস্তবায়ন জরুরি

| মঙ্গলবার , ৪ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে নগরবাসী উপকৃত হবে। দৈনিক আজাদীতে গত ২ মার্চ প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সামাল দিতে তিন ভাগে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। রমজানের প্রথম ভাগ, মধ্য ভাগ এবং শেষ ভাগে নগরীর যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন রাখতে বাস্তবায়ন করা হবে এসব পরিকল্পনা। ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ বাড়তি পুলিশ দেওয়া হচ্ছে নগরীতে। ট্রাফিক পুলিশের সাথে সড়কে দায়িত্ব পালন করবে ক্রাইম বিভাগের সদস্যরাও। পুলিশের পাশাপাশি মার্কেটকেন্দ্রিক যানজট সামলাবেন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকরা। মার্কেটকেন্দ্রিক পেপার্কিংগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরীর রাস্তাজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের চাপ পড়েছে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। এছাড়া নগরজুড়ে অবৈধ পার্কিং, মোড়ে মোড়ে অবৈধ রিকশা, টেক্সি এবং বাসস্ট্যান্ড, হকারদের সড়ক ও ফুটপাত দখল, স্বল্পগতির গাড়ির বেপরোয়া চলাচল তো আছেই। পদে পদে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল। শহরের মূল সড়কগুলোতে বিশ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাতেও সমস্যা হয়। শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তার চিত্র অনেকটা অভিন্ন; চারদিকে গাড়ির জটলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাফিক আইন না মানার সংস্কৃতি শহরের রাস্তায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কে কত ক্ষমতাবান তা প্রদর্শনের সুযোগ নেওয়া হয় আইন ভঙ্গ করে। চালকদের অসচেতনতাও ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপর পড়ে। তারা বলেন, কার আগে কে যাবে এমন একটি প্রবণতা সড়কে দেখা যায়। যানজটে এক ঘণ্টা আটকে থাকতে পারে, কিন্তু অন্য গাড়িকে এক মিনিটের জন্য সাইড দিতে পারে না। হুড়োহুড়ি করে যানজটের জটলা এমনভাবে পাকায় যে, পুলিশ না আসা পর্যন্ত নিস্তার মেলে না। ওয়ান ওয়ে রোডে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল, সড়কের ব্যারিয়ার না মানা, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং সিএনজি টেক্সির বেপরোয়া চলাচল ঠেকাতে পুলিশের দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়।

আসলে যানজট এখন চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক বিড়ম্বনার নাম। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছেু অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রফতানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশীরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বিঘ্নিত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় ৭০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরী অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায় যানজট। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে অনেক সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। বস্তুত যানজটের কারণে চট্টগ্রামবাসীর সামগ্রিক জীবনধারাই পাল্টা গেছে। একসময় এ শহরে ৩০ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে অনেক সময় চলে যায়। এখন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, সামান্য দূরত্ব অতিক্রম করতেও সময় লাগবে আগের থেকে অনেক বেশি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া মানুষ এখন আর কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা চিন্তাও করে না। এই বিচ্ছিন্নতা যে সমাজে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন।

ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেটকারের সংখ্যা বিদ্যুৎ গতিতে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে সামপ্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণেঅকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে।

রমজানে যানজট রোধে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়ন দরকার। বছর জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার খাদখন্দক এবং ভাঙাচোরা দশা, ফুটপাত তো বটেই এমনকি অনেক জায়গায় মূল সড়ক দখল, যত্রতত্র পার্কিং, ঘন ঘন যানবাহন থামানো, রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ ও ময়লা পানি, সরু ও আঁকাবাঁকা পথঘাট প্রভৃতি মিলে যানজট এ নগরীর এক অসহনীয় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সমন্বিত ও বাস্তবধর্মী কার্যক্রম ছাড়া এ সমস্যার নিরসন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন, যানবাহনের মালিকচালক, পথচারী ও যাত্রী সবাইকে দায়িত্বসচেতন হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে