পবিত্র রমজানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকারি সেবা সংস্থাগুলো। গত ৩ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর প্রতি দাবি জানিয়ে থাকেন সিটি মেয়রসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং নগরবাসী। বিশেষ করে রমজানের সারা দিন পানি সরবরাহ, সেহেরি ও তারাবি নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি ওঠে। এবারও নগরবাসী রমজানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার পানি পাওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন। চলতি মাসের ১২ অথবা ১৩ তারিখ পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের সেবা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে কথা হয়। তারা রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহের প্রস্তুতির কথা জানান। অন্যান্যবারের মতো এবারও রমজান মাসে চট্টগ্রাম মহানগরীতে পিডিবি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। পিডিবি চট্টগ্রামের উপপরিচালকের (জনসংযোগ) দপ্তর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এখন কোনো লোডশেডিং নেই। চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। সুতরাং রমজানে লোডশেডিংয়ের আশংকা নেই। চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রমজান মাসজুড়ে নগরীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, চট্টগ্রামে এখন পানির সংকট নেই। নগরবাসীর চাহিদার সমপরিমাণ পানি উৎপাদন করা হচ্ছে।
রমজানে গ্রাহকরা যাতে পানি নিয়ে কোনো কষ্টে না পড়েন এজন্য ওয়াসা প্রতি বছর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে গেট বাল্ব পুনর্বিন্যাস করা, কন্ট্রোল রুম খোলা, ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ তদারকি করা, পানি সরবরাহ তদারকির জন্য ভিজিলেন্স টিম গঠন, পানিভর্তি ভাউজার সার্বক্ষণিক তৈরি রাখা হয়। যেখানে সংকট দেখা দেয় সেখানে ভাউজারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ দেওয়া হয়। এবারও কোথাও কোনো ক্রটির কারণে পানি সরবরাহ বিঘ্ন হলে সাথে সাথে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট এলাকার মডের নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে অথবা সরাসরি ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। এদিকে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ প্রতি বছর রমজানে নগরীতে যানজট সহনীয় রাখতে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের কয়েক শিফটে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়। রমজানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মাঠে পুলিশের বাড়তি ফোর্স দায়িত্ব পালন করে। রমজানে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট ও পয়েন্টে নজরদারিতে থাকে।
আসল কথা হলো, ইফতার, তারাবির নামাজ ও সাহরির সময়ে কোনোভাবেই লোডশেডিং করা যাবে না। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার পরীক্ষা করে প্রতিস্থাপন এবং স্টোরে পর্যাপ্ত ট্রান্সফরমার মজুদ রাখতে হবে। যেভাবেই হোক উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে এবং তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। আমরা জানি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি এমন পরিস্থিতি থেকে দ্রুতই বেরিয়ে আসতে পারবে আমাদের বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় বাধা জ্বালানি সংকট। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে সময়মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রীষ্মে লোডশেডিং মোকাবিলায় সরকার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রাখার যে পরিকল্পনা করেছিল তার মধ্যে রয়েছে পায়রা ও রামপাল কেন্দ্র। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবল তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভর করলে চলবে না; জলবিদ্যুৎ, বায়ুকল, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে।
তুলনামূলক কম গুরুত্বর্পূণ খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। তবে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা যতই আশ্বাস দিন না কেন, রমজানেও লোডশেডিং হতে পারে। তবে সেটা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিকল্প উপায় বের করা জরুরি। তবে সাধারণ মানুষকেও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হওয়া দরকার। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ হলেই তা সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে।