রপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া

চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে আগস্টে

হাসান আকবর | বুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও রপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া লেগেছে। চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া আগস্টে। চলতি বছরের শেষ হওয়া আট মাসের মধ্যে আগস্টে অন্যান্য মাসের তুলনায় গড়ে দেড় গুণের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আলোচিত আগস্টে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এসেছে ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বিশ্বের নানা দেশে প্রেরিত রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনারের ক্ষেত্রেও সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। আগস্টে ৭৮ হাজার ১৪৬ টিইইইএস কন্টেনার রপ্তানি পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে; যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। অপরদিকে বছরজুড়ে আমদানি প্রায় স্থিতিশীল থাকায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে। চলছে ডলার সংকট। ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাসহ নানা প্রতিকূলতায় বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকটের মুখে। বিশ্বের পাশাপাশি দেশেও গত জুলাই এবং আগস্ট মাস চরম অস্থিরতার মধ্যে কেটেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও রপ্তানির পালে হাওয়া লাগায় স্বস্তি বিরাজ করছে রপ্তানিকারকদের মাঝে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি আয় বার্ষিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক খাতে গত অর্থবছরের জুলাইআগস্টের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৭.৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭.১১ বিলিয়ন ডলার। গার্মেন্টস সেক্টরের রপ্তানি বৃদ্ধি স্বস্তির খবর বলে বিজিএমইএর নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার বিদেশে পাঠানো হয়েছিল ৬৩ হাজার ৬৩৪ টিইইউএস। পরের মাসে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৬১ হাজার ৯৯ টিইইউএস। মার্চে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার বিদেশে গেছে ৬০ হাজার ৭৫২ টিইইউএস। এপ্রিলে কমে গিয়ে পণ্য রপ্তানি হয় ৪৮ হাজার ৭৩৭ টিইইউএস কন্টেনার। মে মাসে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৪ হাজার ৫২৩ টিইইউএস।

জুনে রপ্তানি আরো কিছুটা বেড়ে ৬৯ হাজার ৬৬২ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য প্রেরণ করা হয় বিদেশে। জুলাই মাসে রপ্তানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৮৫৪ টিইইউএস। আগস্ট মাসে এসে তা এক লাফে গিয়ে ঠেকে ৭৮ হাজার ১৪৬ টিইইউএসে। এটা চলতি বছরের সর্বোচ্চ রপ্তানি বলে মন্তব্য করে বন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিশ্বের নানা দেশে পাঠানো রপ্তানি পণ্যবোঝাই কন্টেনারগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক শিল্পের।

রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণও বাড়বে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেও আমাদের আমদানি প্রায় স্থিতিশীল রয়েছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা খরচের পরিমাণ আগের মতো একই থাকছে। ফলে রপ্তানি বৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, চলতি বছরের প্রথম মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য আমদানি করা হয়। পরের মাসে আনা হয় ১ লাখ ৩ হাজার ৮৮৬ টিইইউএস কন্টেনার। মার্চে আমদানি হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৪৮৭ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য। এপ্রিলে আনা হয় ১ লাখ ১৭ হাজার ২১৮, মে মাসে আনা হয় ১ লাখ ৩০ হাজার ৪০০, জুনে আনা হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯১, জুলাই মাসে আনা হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ এবং আগস্ট মাসে আনা হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৭০৮ টিইইউএস পণ্য। গত তিন মাস ধরে দেশের আমদানি প্রায় একই ধারায় রয়েছে। অথচ রপ্তানি গড়ে প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। এটা শুভ লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধআমিরাতে বিক্ষোভ করে সাজাপ্রাপ্ত সেই ৫৭ বাংলাদেশি পেলেন ক্ষমা