রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকুক

| রবিবার , ৯ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক ও সামুদ্রিক খাবারের মতো মূল খাতগুলো রপ্তানিতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো সংকটগুলো উপেক্ষা করে রপ্তানি ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় হয়েছে তিন দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর রপ্তানিতে এই অগ্রগতি দেখা গেল। গত মাসে রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার হয়। ফলে চাপে থাকা অর্থনীতিতে আসে কিছুটা স্বস্তি। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গত মাসে এক দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ২৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার হয়। একই সময়ে নিটওয়্যার রপ্তানি ১১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ বেড়ে ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ওভেন পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে।

এদিকে, গত ৪ মার্চ ‘রপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও রপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া লেগেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই সময়ে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২৮.৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৬৮ শতাংশ বেশি। গত জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৪.৪৪ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় এই সময়ে ২৩.৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ৮১.২৯ শতাংশ। রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করছে। সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৬৫ হাজার ৪৫০ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। আগের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যার পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৯৯ টিইইউএস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানিতে একক খাত নির্ভরতার কারণে যেকোনো সময় ঝুঁকিতে পড়বে দেশের রপ্তানি আয়। কাজেই আমাদের এখন রপ্তানি বাজার সমপ্রসারণের উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ বা বহুমুখী রপ্তানির উপাদান নিয়ে কাজ করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের প্রধান শর্ত পণ্য বহুমুখীকরণ। পণ্য বহুমুখীকরণ ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বা নতুন বাজার সৃষ্টি করতে আমাদের বৈদেশিক মিশনগুলোকে কাজ করতে হবে। বিকল্প ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে বাজার বহুমুখী করা এবং রপ্তানি পণ্যও বহুমুখী করে তোলা। ভিয়েতনামের মতো দেশ এই নীতি নিয়ে সাফল্য পেয়েছে। বাংলাদেশের সরকারও বিভিন্ন সময় রপ্তানিকারকদের পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার খুঁজে বের করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনীতি গতিশীল রাখতে রপ্তানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেজন্য ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। সেজন্য যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবেলার জন্য কাজ শুরু করতে হবে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান পত্রিকান্তরে বলেন, ‘কার্যাদেশ ফিরে আসায় পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই ভালো করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা প্রায়ই নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।’ আমরা চাই, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকুক এবং এর জন্য যা যা করণীয়, সব করার প্রস্তুতি নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে