পাহাড়ে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। তবে নতুন ধানের সুবাস জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে এখনো রয়েছে হেমন্তের আমেজ। গতকাল শুক্রবার ব্যতিক্রমী আয়োজন হয়েছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলায়। মাটিরাঙা বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ওয়াচু ১নং রাবার বাগান। জায়গাটাতে মূলত মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসতি। গতকাল সেখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা উদযাপন করলেন অন্যরকম ‘নবান্ন উৎসব’।
গতানুগতিক নবান্ন উৎসব থেকে অনেকখানি আলাদা ছিল এই আয়োজন। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে রাবার বাগানে শুরু হয় পিঠা বানানোর কাজ; যা চলে প্রায় দুপুর পর্যন্ত। গ্রামের মারমা নারীরা অন্তত ১০ ধরনের পিঠা তৈরি করেন। এর মধ্যে ছিল ছেছমা পিঠা, ভাপা পিঠা, কলা পিঠা, বাঁশ পিঠা, সাইন্যা পিঠা, শামুক পিঠা ইত্যাদি। এসব পিঠা উৎসবে আগত অতিথিদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই যোগ দেন উৎসবে।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় শিশুদের জন্য গড়ে ওঠা ‘পাঠশালা বিন্দু থেকে’ উৎসবের আয়োজক। উৎসব উপলক্ষে পুরো গ্রামের বাসিন্দারা একত্রিত হয়েছে। উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার। তিনি বলেন, উৎসবে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, এটি অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকা। এখানে এমন আয়োজন সত্যিই মুগ্ধকর। এর মধ্যে দিয়ে মানুষের মাঝে মেলবন্ধন তৈরি হবে। উৎসবে পিঠা বানানো ছাড়াও কোমর তাঁত বুনে স্থানীয় মারমা জনগোষ্ঠী। বিকেলে ছিল বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসব। সন্ধ্যায় উড়ানো হয় ফানুস বাতি।
উৎসবের আয়োজক ও পাঠশালার সমন্বয়ক জাহেদ আহমেদ টুটুল বলেন, এই এলাকায় এখনো শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি। তাই শিশুদের জন্য বিকল্প পাঠশালা গড়ে তোলা হয়েছে। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবছরই এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।