অবশেষে থামল রংপুর রাইডার্সের জয় রথ। টানা ৮ ম্যাচে অজেয় থাকা রংপুরকে প্রথম হারের স্বাদ দিল মাঠে এবং মাঠের বাইরে নানা সমস্যায় জর্জরিত দুর্বার রাজশাহী। অনেক বড় বড় দল যা পারেনি তা করে দেখাল রাজশাহী। গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্সকে ২৪ রানে হারিয়েছে দুর্বার রাজশাহী। এটি রাজশাহীর চতুর্থ জয়। যে রংপুরকে কেই থামাতে পারছিলনা সে রংপুরকে থামিয়ে দিল রাজশাহী। যদিও এই হারে রংপুর প্রথম স্থান হারায়নি। তবে অজেয় আর রইলনা কোন দল। ইয়াসির আলি রাব্বি আর এনামুল হক বিজয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিং এর পর রায়ান বার্ল, তাসকিন আহমেদ এবং মেহেরবের দারুন নিয়ন্ত্রিত বোলিং এর সুবাধে এই জয় পায় রাজশাহী। ৯ ম্যাচে ১৬ রান নিয়ে শীর্ষেই আছে রংপুর। আর গতকালের জয়ে ১০ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে গেছে দুর্বার রাজশাহী।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা রাজশাহী ২৪ রানে হারায় মোহাম্মদ হারিসকে। ১২ বলে ১৯ রান করা হারিস ফিরেন রাকিবুল হাসানের বলে খুশদিল শাহ এর হাতে ক্যাচ দিয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির হোসেনকে নিয়ে ৫৬ রান যোগ করেন এনামুল হক বিজয়। ১৯ বলে ৪টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৩৯ রান করা সাব্বিরকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন খুশদিল শাহ। পরের রায়ান বার্লকেও ফেরান খুশদিল। পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া রাজশাহীকে টানেন বিজয় এবং রাব্বি মিলে। দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন। এদুজন যখন ব্যাট করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল দুইশ পার হয়ে যাবে রাজশাহীর ইনিংস। কিন্তু ৭৬ রান যোগ করার পর বিচ্ছিন্ন হন দুজন। নিজের হাফ সেঞ্চুরি পুরন করে আরো এগিয়ে যাচ্ছিলেন রাব্বি। কিন্তু খুশদিল শাহকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন রাব্বি। আর সেটা সহজেই তালুবন্দী করেন সোহান। থামে রাব্বির ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংস। ৩২ বলের ইনিংসটিতে ২টি চার এবং ৬টি ছক্কা মেরেছেন রাব্বি। রাব্বি আউট হওয়ার পরপরই নামে রাজশাহীর ব্যাটিংয়ে ধ্বস। পরের ওভারে আকবর আলির সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরেন আনামুল বিজয়। এরপর কেবলই আসা যাওয়া করতে থাকে রাজশাহীর ব্যাটাররা। বিজয় ফিরেন ৩১ বলে ৩৪ রান করে। এরপর পর মাত্র ১৩ রান যোগ করতে ৬টি উইকেট হারায় রাজশাহী। আর তাতে বড় হয়নি তাদের ইনিংস। ১৭০ রানে থামে দুর্বার রাজশাহী। রংপুর রাইডার্সের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন আকিফ জাবেদ এবং খুশদিল শাহ।
১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ইরফান শুক্কুরকে হারায় রংপুর। গতকালই প্রথম এবারের বিপিএলে খেলতে নেমেছিলেন ইরফান। দুই বল খেলে রানের খাতা খোলা হয়নি ইরফানের। চতুর্থ ওভারে পরপর দুই বলে ফিরেন স্টিভেন টেইলর এবং ইফতেখার আহমেদ। ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন চাপে রংপুর। চতুর্থ উইকেটে খুশদিল শাহকে নিয়ে ৪০ রান যোগ করেছিলেন সা্ইফ হাসান। এ জুটি ভাঙেন সাব্বির হোসেন। তিনি ফেরান খুশদিল শাহকে। ১৩ বলে ১৪ রান করে ফিরেন এই পাকিস্তানি। শুরু থেকে লড়াই করে যাওয়া সাইফ হাসান অবশেষে রণে ভঙ্গ দেন। শফিউলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে রাব্বির ক্যাচে পরিণত হন ২৯ বলে ৪৩ রান করা সাইফ। একই জায়গায় দাড়িয়ে তিনটি ক্যাচ নেন রাব্বি। অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান চেষ্টা করেছিলেন দলকে টেনে নেওয়ার। ভালই খেলছিলেন সোহান। কিন্তু দলের প্রয়োজনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ঘটাল ছন্দ পতন। রায়ান বার্লের বলে সীমানায় মোহর শেখের ক্যাচে পরিনত হয়ে ফিরেন ২৬ বলে ৪১ রান করা সোহান। শেষ ১২ বলে রংপুরের দরকার ছিল ৩৪ রান। বার্লের করা ১৯ তম ওভারের প্রথম বলে স্টাম্পড হয়ে ফিরেন আকিফ জাবেদ। দ্বিতীয় বলে রাকিবুল হাসান নিলেন এক রান। তৃতীয় বলে সাইফুদ্দিন মারলেন ছক্কা। আর চতুর্থ বলে সেই সাইফুদ্দিনকে ফেরালেন বার্ল। ১৪ বলে ২৩ রান করে আসেন সাইফুদ্দিন। পরের দুই বল থেকে এক রান নিতে পারেননি নাহিদ রানা। ওয়াইড থেকে এসেছে এক রান। শেষ ওভারে রংপুরের দরকার ২৫ রান। তাসকিনের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফিরেন নাহিদ রানা। আর তাতেই ১৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায় রংপুর রাইডার্স। রাজশাহী মাতে ২৪ রানের জয়ের আনন্দে। রাজশাহীর পক্ষে রায়ান বার্ল নিয়েছেন ২২ রানে ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ এবং মেহেরব।