চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণমুখী যান চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বাকলিয়া এক্সেস রোড পুরো এলাকার যানজটের কারণ হয়ে উঠেছে। সিরাজউদ্দৌলা রোডের মাঝখানের ডিভাইডারের ‘মিডিয়ান গ্যাপ’ বন্ধ করে দেওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে এই রোডে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে বাড়তি পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যের দিকে যেতে হয়। কিংবা রং সাইডে ঢুকতে হচ্ছে। রং সাইডে গাড়ি চলাচলের কারণে ঝুঁকি ও যানজট দুটোই বেড়েছে।
নগরী থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী যান চলাচলে গতি আনতে সিরাজউদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকলিয়া এঙেস রোড নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই সড়কটির নির্মাণ নিয়ে জটিলতা ছিল। সড়কটির অ্যালাইনমেন্টের মাঝে সিডিএ অনুমোদিত দশ তলা একটি ভবন নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা প্রকল্পটিকে ঝুলিয়ে রাখে। অনুমোদিত ওই ভবন ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে ভবনটির মালিককে ১১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। ভবনটি ভাঙার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয় ১৫ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ায় আবার নতুন করে কমিটি করা হয়। পরে অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে বাকলিয়া থানা পর্যন্ত (বহদ্দারহাট শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক) বিস্তৃত ৬০ ফুট প্রস্থের চার লেনের সড়কটি নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিরাজদ্দৌলা রোড থেকে আড়াআড়িভাবে গিয়ে চাক্তাই খাল পার হয়ে ডিসি রোড থেকে উত্তর–পশ্চিম কোণে বেঁকে বগার বিল, সৈয়দ শাহ রোড অতিক্রম করে বাকলিয়া থানার পাশে গিয়ে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কে যুক্ত হওয়া সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২শ ১০ কোটি টাকা। চালুর পর থেকে রাস্তাটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়। আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখো মানুষের কাছে রাস্তাটি ‘শহর’কে কাছে নিয়ে আসে। কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পার হয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে চন্দনপুরা কিংবা আন্দরকিল্লা পৌঁছার যে সুযোগ তাতে রাস্তাটিতে যান চলাচল প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।
শাহ আমানত সংযোগ সড়ক থেকে এসে রাস্তাটি সিরাজউদ্দৌলা রোডের যেখানে সংযুক্ত হয়েছে সেখানে তিন রাস্তার মোড় তৈরি হয়েছে। আন্দরকিল্লা থেকে যাওয়া গাড়ি সিরাজউদ্দৌলা রোডের ডিভাইডারের ‘মিডিয়ান গ্যাপ’ পার হয়ে এঙেস রোড ধরে চলে যেত। একইভাবে বাকলিয়ার দিক থেকে আসা গাড়ি সিরাজউদ্দৌলা রোডের ডিভাইডার পার হয়ে চকবাজারের দিকে চলে যেত। এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় যাওয়ার মিডিয়ান গ্যাপের অর্ধেক কিছুদিন আগে পুলিশ বন্ধ করে দেয়। যানবাহন চালকেরা মিডিয়ান গ্যাপের বাকি অর্ধেক অংশ দিয়ে চলাচল করত। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ পুরো মিডিয়ান গ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে যানবাহন চালকদের গুলজার বেগম স্কুলের সামনে গিয়ে ঘুরে রাস্তার অপর পাশের লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এঙেস রোডে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
অপরদিকে বাকলিয়া থেকে আসা গাড়িগুলো চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের সামনে পর্যন্ত এসে মিডিয়ান গ্যাপের দেখা পাচ্ছে। মিডিয়ান গ্যাপ বন্ধের ফলে ঘুরপথ তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন যানবাহন ‘সোজা পথে’ চলছে না। তারা রং সাইডে গিয়ে কোনোরকমে পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রং সাইডে চলা শত শত রিকশা, টেঙিসহ নানা ধরনের গাড়ির কারণে সিরাজউদ্দৌলা রোড এবং বাকলিয়া এঙেস রোডে জটলা তৈরি হচ্ছে। গ্যাস বা তেল বাঁচানোর জন্য অনেক গাড়ি এভাবে রং সাইডে চলাচল করতে গিয়ে ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে করে বাকলিয়া এঙেস রোডের সুফল পুরোপুরি মিলছে না। যানজটে সময় নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক গাড়ি চালক। তারা বলেন, আরামে ছিলাম। রাস্তার মিডিয়ান গ্যাপ বন্ধ করে দিয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে।
এ বিষযে নগর ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিডিয়ান গ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে যান চলাচলের স্বার্থে। ওখানে এত বেশি গাড়ি ইউ টার্ন নেওয়া শুরু করেছিল যে, সিরাজউদ্দৌলা রোডে যানজট তৈরি হচ্ছিল। সিরাজউদ্দৌলা রোড শহরের একটি মেইন স্ট্রিম রোড। এই রোডের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মিডিয়ান গ্যাপটি বন্ধ করে কিছুটা সামনের গ্যাপ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।