ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরের হাজারী গলিতে যৌথবাহিনীর ওপর এসিড নিক্ষেপ ও হামলা–ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম। গতকাল বুধবার বিকেলে নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি আসকারদীঘি হয়ে কাজীর দেউড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জোবায়ের আলম মানিক, চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ প্রমুখ।
কোটি কোটি ছাত্র–জনতা থাকতে এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না উল্লেখ করে সমাবেশে চবি শিক্ষক ড. শহীদুল হক বলেন, একটি ছেলে ফেসবুকে ইসকনের বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে, সে ক্ষমা চেয়েছে, তারপরও তার দোকানে হামলা করা হয়েছে, ভাঙচুর করেছে– এটা কিসের নমুনা? তিনি বলেন, আমরা চাই না, বাংলাদেশ ফিলিস্তিন হোক। আমরা চাই না বাংলাদেশ কাশ্মীর হোক। আমরা চাই না বাংলাদেশ মিয়ানমার হোক। এদেশের ৯০ ভাগ মুসলমান, কিন্তু আমরা শান্তিপ্রিয়। আমরা সামপ্রদায়িক সমপ্রীতিতে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, হাজার বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান একতাবদ্ধ থেকে অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছি। কিন্তু কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে, একটা উগ্রবাদী সংগঠন আমাদের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করছে।
ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাঁই এ বাংলার মাটিতে হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, কিছু উগ্রবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে আমাদের দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আমাদের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আমাদের এই দেশকে যদি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হয়, সেই ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব। ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাঁই এ বাংলার মাটিতে হবে না। যেদিকে পা বাড়াবেন, সেই পা আমরা ভেঙ্গে দেব।
কারও রাজনীতির হাতিয়ার না হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান– সবাই মিলেমিশে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়েছি। আপনাদের অন্ধ চোখ আপনারা খুলুন। কারও রাজনীতির হাতিয়ার আপনারা হবেন না। আমাদের নতুন বাংলাদেশ ভারত–আমেরিকা গঠন করে দেয়নি, হাজার–হাজার ছাত্র–জনতার রক্তে নতুন বাংলাদেশ হয়েছে। এসময় হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এর আগে, গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওসমান আলী নামের একজন ব্যক্তির ইসকনবিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন দুষ্কৃতকারী হাজারী লেনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হন। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর এসিড হামলা করে দুর্বৃত্তরা।