যৌতুক না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় যৌতুক না পেয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহবধূর নাম নাঈমা সুলতানা নিশি (১৯)। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের দক্ষিণ ঢেমশা নাপিতের চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে শাশুড়ির দাবি হত্যা নয়, পুত্রবধূ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের কাপাসিয়ার সবুজ মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায় রিকশা মেকানিকের কাজ করেন এবং পরিবারপরিজন নিয়ে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া ব্যবসায়ী পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। ৩৪ মাস আগে সবুজ মিয়ার মেয়ে নাঈমা সুলতানা নিশির সাথে ঢেমশা ইউনিয়নের দক্ষিণ ঢেমশা নাপিতের চর এলাকার জালাল আহমদের ছেলে মোরশেদুল আলমের বিয়ে হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে নাঈমা সুলতানা নিশির স্বামী মোরশেদুল আলম ও শাশুড়ি পারভীন আকতার মুঠোফোনে নাঈমার বাবামাকে জানায়, তাদের মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালে আনা হয়েছে। খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে ছুঁটে এসে দেখেন তাদের নাঈমা মারা গেছে।

নাঈমা আকতারের মা শামসুন্নাহার জানান, আমার মেয়ে অসুস্থ ছিল না। স্বামীশাশুড়ি মিলে আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। বাড়িতে হত্যার পর হাসপাতালে এনেছে। হাসপাতালে আনার পর আমাদের ফোন করে মেয়ে অসুস্থ হয়েছে বলে জানায়। কিন্তু আমি হাসপাতালে আসার পর দেখি আমার মেয়ে মৃত।

শামসুন্নাহার আরো জানান, বিয়ের সময় মেয়ের শাশুড়ি এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছিল। কিন্তু আমরা এতো টাকা যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবো না বলে জানিয়ে দিই। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি ছেলের সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু ছেলে মায়ের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়। বিয়ের সময় ছেলেকে ৪০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়ার কথা হয়। এর মধ্যে ২২ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছি। বাকী ১৮ হাজার টাকা দিতে পারছি না। এ অবস্থায় এক লক্ষ টাকা কোথায় থেকে দিব। বিয়ের পর থেকে মেয়ে আমার বাসায় ছিল। গত ২০২৫ দিন আগে মেয়েকে হাসপাতালে নেয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যায় তার স্বামী। এর কয়েকদিন পর মেয়ের শাশুড়ি পুনরায় আমার বাসায় এসে এক লাখ টাকা যৌতুক দিতে বলে। অন্যথায় মেয়েকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিল। শাশুড়ির সেই হুমকি অনুযায়ী আমার মেয়েকে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

অন্যদিকে, গৃহবধূ নাঈমা সুলতানা নিশির শাশুড়ি পারভীন আকতার জানান, ছেলের বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। ফলে বিয়ের পর থেকে ছেলে শ্বশুরের ভাড়া বাসায় ছিল। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হলে আমি পুত্রবধূকে ঘরে নিয়ে আসতে বলি। এখন থেকে ২০২৫ দিন আগে আমার বাড়িতে এনেছে। ঘটনার সময় আমি ঘরের নিকটবর্তী বিলে ছিলাম। ছেলে ও পুত্রবধূ ঘরে ছিল। তাদের মধ্যে কি সমস্যা হয়েছে আমি জানি না। এক পর্যায়ে ঘরে চিৎকার চেচামেচি শুনার পর আমি ফিরে আসি। তখন দেখি নিশি গলায় ফাঁস লাগিয়েছে। পরে আমরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যৌতুক দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ছেলে তার পছন্দ মতো বিয়ে করেছে। আমি কেন যৌতুক চাইব? ছেলে যৌতুক নিয়েছে কিনা তাও আমি জানি না।

কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খাইরুল ইসলাম রিজভী জানান, নাঈমা সুলতানা নিশিকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। তার গলায় হালকা দাগ রয়েছে। শরীরের অন্য কোথাও কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নাই।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার জানান, গৃহবধূ নিশির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজান পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৩
পরবর্তী নিবন্ধদুই কোটি টাকার সম্পদের মালিক রাঙ্গুনিয়ার মাদক কারবারি আমজু