অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে বাজেট পাস হলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
বিড়ি–সিগারেট–জর্দা : প্রস্তাবিত বাজেটে (২০২৪–২৫) সিগারেট ও এ জাতীয় পণ্যের সম্পূরক শুল্কের হার ৬৫ শতাংশের পরিবর্তে ৬৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া সিগারেট বা বিড়ি পেপারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে মূসকের হার সাড়ে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ হচ্ছে। ফলে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাড়ছে বিড়ি–সিগারেট ও জর্দার দাম।
এছাড়া প্রতি দশ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪৮ টাকা এবং প্রতি দশ গ্রাম গুলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। মোবাইল সিম ও কলরেট : মোবাইল ফোনের সিম/রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিপরীতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি সিম কার্ড/ই–সিম সরবরাহের বিপরীতে বিদ্যমান মূসকের পরিমাণ ২০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মোবাইল ফোনের কলরেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের সঙ্গে নতুন করে আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের ১ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। যে কারণে একজন গ্রাহক এখন ১০০ টাকার রিচার্জ করলে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কেটে নেওয়ার পর ৬৯ টাকা ৩৫ পয়সার কথা বলতে পারবেন।
চিকিৎসা সেবা : হাসপাতালে ব্যবহৃত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আমদানির শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ বাড়বে।
আমসত্ত্ব ও জুসের দাম : বাংলাদেশে আম থেকে তৈরি হওয়া আমসত্ত্ব বেশ জনপ্রিয়। একই সাথে আম, আনারসের জুসও অনেকের প্রিয়। হালে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেয়ারা ও তেঁতুলের জুসও।
অর্থমন্ত্রী এবার উৎপাদন পর্যায়ে এসব পণ্যের মূল্য সংযোজন কর পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন। ফলে আমসত্ত্বের পাশাপাশি এ চারটি জুসের দাম বেড়ে যাবে বাজারে।
কাজু বাদাম : কাজু বাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ হতে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে দেশে উৎপাদিত কাজু বাদামের বাজার বিকাশের উদ্দেশ্যে কাজু বাদাম আমদানিতে ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে।
আইসক্রিম : সকল ধরনের আইসক্রিমের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে।
কোমল পানীয় : কার্বনেটেড বেভারেজে সম্পূরক শুল্ক হার ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে কোমল পানীয়ের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপাদান অপেক্ষা ভিন্নতর মাত্রার উপাদান সম্বলিত পানীয়ের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে।
ফ্রিজ–এসি : দেশে ফ্রিজ–এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কমেপ্রসার ও সব ধরনের উপকরণের ভ্যাট এবং শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাই এসি ও ফ্রিজের দাম বাড়বে।
এলআরপিসি তার : এলআরপিসি তার উৎপাদনকারী শিল্পের কাঁচামাল ওয়্যার অব আইরন বা নন–অ্যালয় স্টিল আমদানিতে আমদানি শুল্ক শতাংশ হতে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নির্মাণখাতে খরচ বাড়বে।
গাড়ি কনভার্সনে : গাড়ি সিএনজি–এলপিজিতে কনভার্সনে ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়বে।
জেনারেটর : লোডশেডিং মোকাবিলায় বাসাবাড়ি বা শিল্পে জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। যে কারণে দেশের বাজারে জেনারেটরের দাম বাড়বে।
ম্যাকরেল মাছ : ম্যাকরেল মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর যোগ করায় দাম বাড়বে।
পর্যটন : অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, থিম পার্কে মূসক ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়বে ঘোরাঘুরি তথা পর্যটন খরচ। নিলামকারী সংস্থা, সিকিউরিটি সার্ভিস ও লটারির টিকিটে মূসক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করা প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্মাণ খরচ : ইটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুনির্দিষ্ট কর ১০ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বাড়বে নির্মাণ খরচ। এছাড়া শিল্পে ব্যবহৃত ৩৩টি আইটেমের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক বসানো হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যেরও দাম বাড়বে – অপরিশোধিত ভোজ্যতেল, টিউব লিসেনিং জেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, প্যাট চিপস উৎপাদনে ব্যবহৃত ইথাইলিন গ্লাইকল, পানির মোটর উৎপাদনকারী অ্যালুমিনিয়াম ইনগট, ফ্লোরোসেন্ট বাতির যন্ত্রাংশ, কাচ, প্লাস্টিক, এলইডি টেলিভিশন উৎপাদনে ব্যবহৃত এলইডি বাল্ব, বাতি উৎপাদনে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় প্রভৃতি।