ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু যখন স্বামীর আসল পরিচয় জানতে পারেন, ততদিনে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। পেছনে ফেরা হয়নি আর। নানা জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এরপর ঠাঁই হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বনে গেলেন রোহিঙ্গা নারী। এখানেই ঘটনাটি শেষ হতে পারতো। কিন্তু বিধিবাম। স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে পড়লে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে শেকড়ে ছুটে আসতে হয় তাকে।
সব শুনে হতভম্ব হয়ে পড়ে পরিবার। মানসম্মান রক্ষা ও জীবিকা নিশ্চিতে তাকে ওমান পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। পাসপোর্ট বানাতে ডবলমুরিংয়ের মনসুরাবাদ অফিসে যান তিনি। সৃষ্টি হয় বিপত্তি। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়েন। নামের মিল ছিল না। কিন্তু ফিঙ্গার প্রিন্টে দেখা যায়, তিনি একজন রোহিঙ্গা। অতপর গ্রেপ্তার হয়ে আদালতের মাধ্যমে যেতে হলো হাজতে।
যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া এলাকার পূর্ব খুরুশিয়া গ্রামের মৃত নুর আলমের মেয়ে সিরাজ খাতুন (৩২)। রোহিঙ্গা যুবকের বৈবাহিক প্রতারণার শিকার হয়ে ৯ মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ গত ৩ জুন গ্রেপ্তার হন তিনি। ১২ দিন ধরে রয়েছেন চট্টগ্রাম কারাগারে।
তবে বাংলাদেশি নাগরিক সিরাজ খাতুনের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ। আইনি সহায়তা দিয়ে আদালতের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে জামিন আবেদন করে তারা। আদালতও বিষয়টি আমলে নেন। স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীর জিম্মায় সিরাজ খাতুনের জামিন মঞ্জুর করেন। গতকাল বুধবার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে বিএইচআরএফ চট্টগ্রামের সভাপতি এ এম জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, দুই দফা আবেদন করেও সিরাজ খাতুনের জামিন হয়নি। তবে তৃতীয়বার আদালতের কাছে সিরাজ খাতুনের অসহায়ত্ব সম্পূর্ণ তুলে ধরলে বিচারক তা বুঝতে পারেন। একপর্যায়ে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। খুব শীগ্রই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।
আদালতসূত্র জানায়, ১০ বছর আগে রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়া এলাকায় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন রোহিঙ্গা যুবক সিদ্দিকী। পাশাপাশি অন্যের ফসলি জমিতে কাজ করতেন তিনি। এক সময় সিরাজ খাতুনের সাথে পরিচয় হয় তার। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। ঠিক করেন, দুজনে বাকি জীবন একসাথে কাটাবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু নানা জায়গায় ঘুরেও যেন স্থির হতে পারছিলেন না তারা। একপর্যায়ে আটক হন পুলিশের কাছে। পুলিশ তাদের পাঠিয়ে দেয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে নতুন করে পথচলা শুরু করেন দুজনে। এর মধ্যে ত্রাণের আশায় সিরাজ খাতুনকে রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, পালিয়ে বিয়ে করার পরপরই সিরাজ খাতুন জানতে পারেন তার স্বামী একজন রোহিঙ্গা। কিন্তু তখন তার আর কিছু করার ছিল না। মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করেন। এর মাঝে স্বামী তার উপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে যায় সিদ্দীক। এরপর থেকে সিরাজ খাতুন তার ২ সন্তানকে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অসহায় হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে তাকে ছুটে আসতে হয় রাঙ্গুনিয়ার উত্তর পদুয়ার সেই গ্রামে।