এই যে, কী হলো তোমার? এভাবে চুপ করে বসে থাকবে নাকি! আমি প্রতিদিন তোমাকে খুঁজি একটু স্নিগ্ধ ভালোবাসা পেতে। কিন্তু তুমি এত কিপ্টে, আমিতো রীতিমতো হতাশার সাগরে ভাসতে ভাসতে এক সময় এতটাই ক্লান্ত হয়ে যাই যে, নিজেকেই হারিয়ে ফেলি অবচেতনায়। আসলে তোমার এই একটি মাত্র ছবি দেখে আমি কত যে বিষাদের অযাচিত সময় পার করেছি এই অগোছালো জীবনে। চলেই যখন যাবে, তাহলে এই ছবিখানা কেন রেখে গিয়েছিলে! আসলে সেটাও হয়তো তোমার অনিচ্ছায় কাকতালীয়ভাবে ঘটে গেছে আমার কষ্টটা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে। তবে এই কষ্টটা আমি বেশ উপভোগ করি। কারণ আমার মতো পাগল প্রেমিক হয়ে একজন কঠিন সুন্দরীকে কয়জন এভাবে দিনের পর দিন ভালোবেসে যেতে পারে! তুমি যেখানে আজ অনুপস্থিত, সেখানে তোমার সামান্য স্মৃতি যা অন্তরের অন্তস্থলে ধারণ করে এতটুকু ম্লান হতে দেয়নি এই অতি সাধারণ যুবক। জানো, তোমার ঐ মায়াবী হাসি এখনো আমাকে মাঝে মাঝে স্বপ্নের মাঝে বিচলিত করে। সেটা খুব স্বাভাবিক, কারণ, তোমার ঐ মিষ্টি সাবলীল হাসি দেখলে মনে হতো যেন গোলাপের পাঁপড়ি ঝরে পড়ছে।
আর তোমার কানের লতি বেয়ে ঝুলে পড়া কোঁকড়া চুলগুলো দেখে আমি নাম দিয়েছিলাম কেশকর্ণ। মনে পড়ে সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। কিন্তু আমাদের রমনা বটমূলে যাওয়া হয় নি। গিয়েছিলাম পড়ন্ত বিকেলে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে যেখানে তুমি আর আমি খুব কাছাকাছি বসেছিলাম। তুমি আকস্মিক চোখ বন্ধ করে রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসি ভালোবাসি গানটা বেশ শ্রুতিমধুর কণ্ঠে গাওয়া শুরু করলে। তখন আমিও একদম মনোযোগী শ্রোতার মতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম তোমার কণ্ঠে গাওয়া সেই রবী ঠাকুরের বিখ্যাত গানটা। তারপর তোমার সেই দৃষ্টিনন্দন কেশকর্ণে দুষ্টুমির ছলে আমি ফু দিতেই তোমার বাবা এসে হাজির। তারপর যা হলো, সেটাতো আমার জীবনের অন্যতম অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা। যেটি তোমার আর আমার বিশুদ্ধ ভালোবাসায় জন্ম নেয়া পাঁচ বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে আর কিছু বাকি রইলো না। তোমার বাবার কঠিন সিদ্ধান্তে তোমার স্বপ্নের পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও আইনগত নিবন্ধিত হতে বিয়ের পিড়িতে বসার আগেই বিচ্ছেদ! যেটি আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে বিশেষণ হিসেবে আমাকে আজ দারুণভাবে আহত করে ফেলেছে। তুমি আজ অনেক দূরে চলে গিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছো। কিন্তু আমি তোমাকে কখনোই এতটুকু দোষারোপ করবো না। কারণ, তুমি আর আমি দু’জন ছিলাম নেহাত নীতিবান জুটি আর বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দুজনের সেই নিঃস্বার্থ সম্পর্ক আজ যে পরিস্থিতির শিকার। তবে আজ তোমার মায়াভরা চাহনির এই ছবিখানা দেখে তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে। যেখানেই থেকো ভালো থাকো, খুব বেশি ভালো থেকো।