চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া হাঁসের দীঘি থেকে শুরু হয়ে পূর্ব দিকে ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাঁসিয়াখালী-লামা-আলীকদম সড়ক। দেশের অপরাপর স্থানের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে সড়কটি ব্যবহার করে থাকে পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলার জনসাধারণ। তবে পাহাড়ের মধ্যে তৈরি আঁকাবাঁকা সড়কটি ক্রমশ হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে নতুন চালকদের জন্য। সড়কটির বাঁকে বাঁকে রয়েছে মৃত্যুফাঁদ। মুহূর্তের অসতর্কতায় কয়েকশ ফুট গভীর পাহাড়ি খাদে পড়ে বিপন্ন হতে পারে জান-মাল।
সূত্র জানায়, আশির দশকের শুরুর দিকে সেনাবাহিনীর ইসিবি শাখা সড়কটি নির্মাণ করে। সে সময় দুর্গম পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করতে হয়েছিল তাদের। এতে সেনাবাহিনীর ২৯ জন অফিসার ও সদস্য মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৯ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সড়কটি উদ্বোধন করেন। পরে ১৯৯০ সালের দিকে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিকট সড়কটি হস্তান্তর করা হয়। তবে সে সময়ের তুলনায় বর্তমানে এ সড়কে যান চলাচল বেড়েছে বহুগুণ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাস্তবমুখী পরিকল্পনার অভাবে সড়কটি ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই কম বেশি সড়কটি মেরামত করা হয়। তবে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও প্রাক্কলন তৈরির অভাবে টেকসই হচ্ছে না সড়কটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের হাঁসের দীঘি থেকে লামা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ২০টির অধিক ভাঙন কবলিত এলাকা রয়েছে। অসংখ্য স্থানে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। ইতোমধ্যে এসব ভাঙন কবলিত স্থানে আলীকদম সেনা জোনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
এক বেসরকারি পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত তিন বছরে সড়কের ভাঙন কবলিত এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে ছোট-বড় দেড় শতাধিক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ জন নিহত এবং কয়েকশ যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার দুপুরে সড়কের পশ্চিম লাইনঝিরি এলাকায় বালু বোঝাই ট্রাক একটি মোটর সাইকেল ও মাহেন্দ্রকে চাপা দিলে একই পরিবারের দুই নারীসহ তিন জন নিহত এবং এক শিশুসহ ৪ জন আহত হয়।
জানা গেছে, ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের মধ্যে হাঁসের দীঘি থেকে লামা অংশের ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের এ অংশের পশ্চিম লাইনঝিরি, মাদানী নগর, মিরিঞ্জা, নয় মাইল, বদুঝরি, ইয়াছা মোড়, ছয় মাইলের মাথায় রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক।
লামা-চকরিয়া সড়কের পরিবহন (জিপ) মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বেশিরভাগ সময় ঝুকিপূর্ণ বাঁকের পরে পাহাড়ি ঢালুর বিষয়টি নতুন চালকরা আন্দাজ করতে না পেরে দুর্ঘটনায় পড়েন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক কেটে সড়ক প্রশস্ত করে দেয়ার দাবি জানান।
বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী পুনেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, সড়ক প্রশস্তকরণের বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে যে সকল ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে, সেসব স্থানে সড়কের পাশে মাটি দিয়ে উঁচু করার পরিকল্পনা রয়েছে।