যে কোনো মূল্যে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| রবিবার , ২৮ জুলাই, ২০২৪ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কার্যালয়ে নগরের পরিবহন মালিকশ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি রাতের বেলা যত্রতত্র গাড়ি না রাখার জন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া যানবাহন পাহারায় প্রশাসনের পাশাপাশি মালিকশ্রমিকদের নিয়ে একটি কমিটি করারও পরামর্শ দেন মেয়র এবং বলেন, যারা মালিকশ্রমিক আছেন উভয়ই গাড়ি পাহারা দেন। কোথাও কোনো সমস্যা দেখলে প্রশাসনকে অবহিত করুন। প্রয়োজনে আমাকে জানান। প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় যাত্রী, মালিক, গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে প্রশাসন সজাগ আছে বলেও মন্তব্য করেন মেয়র।

তিনি সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ৮টি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। এগুলো হচ্ছেসড়কে কোনো গাড়ি আক্রান্ত হলে মামলা নেওয়া, সড়কে যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পণ্য পরিবহনে পাহারা দেওয়া, গণহারে মামলা না দেওয়া, যত্রতত্র গাড়ি তল্লাশি বন্ধ করা, আক্রান্ত মালিকশ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও বাসট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা।

মতবিনিময় সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলে বাজারে পণ্যের সঙ্কট দেখা দেয়, এতে সাধারণ মানুষ কষ্ট পায়। এজন্য পুলিশ আপনাদের পাশে আছে। আপনারা সরকার নির্ধারিত সময় ও গাইডলাইন মেনে পুরোদমে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা নিন।

সভায় পরিবহন শ্রমিকমালিক নেতৃবৃন্দ জানান, আন্দোলনে তাদের অনেক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, শ্রমিকদের আহত করা হয়েছে। তারা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে যে কোনো সঙ্কট নিরসনে প্রথমে পুলিশ এগিয়ে আসে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সদস্যরা সাধারণত নিজেদের জীবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। তাঁরা সবসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত থাকেন। যতটুকু জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে পুলিশ বাহিনীকে সর্বাধুনিক করেছেন। বাড়ানো হয়েছে জনবল। পাশাপাশি উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশ এখন দক্ষ ও পেশাদারত্বের মনোভাব নিয়ে কাজ করছে। তবু নগরবাসীর শঙ্কা হলো অশুভ শক্তির চোরাগোপ্তা হামলা নিয়ে। যেভাবে ওরা ওঁত পেতে থাকে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে, তা থেকে রেহাই পেতে তাঁরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। যেন তাঁরা অধিকহারে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পান। অশুভ শক্তি যেন কোনোভাবেই সুবিধা করতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের তৎপর হতে হবে। যদিও আমরা সরকারকে কঠোর ভূমিকায় দেখছি।

তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, কোটা আন্দোলনের এক পর্যায়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, বিঘ্নিত করা হয় মানুষের জানমালের নিরাপত্তা। ফলে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তবে সরকার কঠোর হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে, যারা বাংলাদেশ টেলিভিশন, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আক্রমণ করেছে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আর এসব করেছে বিএনপি ও জামায়াত। শিক্ষার্থীরা এসব করেননি। আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষেত্রে সংগঠিত শক্তি ও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সরকার কঠোর নয়। কোটা সংস্কারের মূল দাবি আদালতের রায়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও সরকার কাজ করছে। সংঘর্ষ ও প্রাণহানি যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারকে কঠোর হতে হয়েছে।

আসলে আমরা প্রতিটি সড়কমহাসড়কে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। কোনো মতেই অনিরাপদ সড়ক কামনা করতে পারি না। সড়ক দুর্ঘটনা যেমন চাই না, তেমনি সড়কে ধ্বংসযজ্ঞও চাই না। গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধে সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে। কঠোর হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সদস্যদের। যেকোনো মূল্যে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে