১৮ এপিল। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবস। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল। যেদিন থেকে চার দিনের জন্য চট্টগ্রামের আকাশে উড়েছিলো স্বাধীন পতাকা। চট্টগ্রামের বুকে অনেক ছোটো বড়ো পাহাড়ের সমাবেশ। করলডাঙা পাহাড়ের ওপরে মেধস মুনির আশ্রম। অরণ্যে ঘেরা নির্জন জায়গা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হল এইখানেই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম শহরে দুটি অস্ত্রাগার পুলিশ অস্ত্রাগার এবং অক্সিলিয়ারি ফোর্সের অস্ত্রাগার। তাছাড়া শহরের টিলার মাথায় টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ কেন্দ্র। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে রেললাইন। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো– পুলিশ অস্ত্রাগার এবং অক্সিলিয়ারি ফোর্সের অস্ত্রাগার দখল করা হবে। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ ভবন ধ্বংস করা হবে, ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে, চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে এবং বিদ্রোহের খবর প্রচার করতে হবে। দিনটি ছিলো গুড ফ্রাইডে। এই দিনটিকে বেছে নেবার কারণ ছিল ওইদিন আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। সেবারের বিপ্লব ব্যর্থ হলেও পরে ইমন ডি. ভ্যালেরার নেতৃত্বে আয়ারল্যান্ড ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে সফল হয়। সেই দিনটাও ছিল গুড ফ্রাইডের দিন। সেদিন সমস্ত ইউরোপীয়রা ব্যস্ত থাকবে সেই দিবস উদযাপনে, স্বাভাবিক ভাবেই পাহারা সেদিন শিথিল থাকবে। ফলে ধরেই নেওয়া হল যে সেই দিনটিতে জয় হবে অনিবার্য। সেদিনই মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়। দখল করে নেন অস্ত্রাগার। সবকিছু চলে আসে নিজেদের দখলে। এই ১৮ এপ্রিল থেকে চারদিন চট্টগ্রাম ছিল স্বাধীন। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে ইংরেজ সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যুব বিদ্রোহের বিপ্লবীদের মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে অন্তত ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত ও ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন। আহত হন অনেকে। স্বাধীনতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় ব্রিটিশ বিরোধী বীর সেনানীরা। যেই স্বাধীনতা ফিরে পেতে প্রাণ দিতে হয়েছে কতো বিপ্লবীদের। আত্মাহুতী দিয়েছেন মাস্টার দা, প্রীতিলতাদের মতো আরো অনেক বীর বিপ্লবী।