যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিষয়ে পর্যবেক্ষণের কোনো ‘ভিত্তি নেই’ বলে দাবি করলেও চলমান ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত’ নয় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল ঢাকার বংশালে যুবলীগের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন তিনি। যুক্তরাষ্টুকে তাদের গণতন্ত্র ‘ত্রুটিমুক্ত’ করার কথাও তিনি বলেন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘কেন্দ্রীভূত’। পাশাপাশি ২০১৮ সালের যে সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন সেই নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে না যুক্তরাষ্ট্র। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে একটা প্রতিবেদন দিল, গত নির্বাচন নাকি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। বিরোধীদলের কর্মসূচিতে নাকি আমরা বাধা দিই। নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্দেশে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পৃথিবীর কোন দেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত? আমরাও শতভাগ পারফেক্ট নই। আমাদের এখানে আমরা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নই। কিন্তু যেটাকে আপনারা ত্রুটিমুক্ত বলেন, সেটা যদি আপনারা বলেন, তাহলে ২০১৮–এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দল জিতত? এই সত্যটা স্বীকার করেন না। গণতন্ত্রের ত্রুটি দেশে–দেশে আছে। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের দেশেও আছে। তাদের দেশেও গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সেতুমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প… আজ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করেননি। অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার আগে এ কথা কি ভুলে যান? নিজের ঘরের চিত্রটা দেখুন, কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের নির্বাচনের বিরুদ্ধে ক্যাপিটাল হিলে… পাঁচটি প্রাণ রক্তাক্ত হয়ে ঝরে গেছে। সেই ইতিহাস আমরা কিন্তু ভুলিনি। আপনাদের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার নির্বাচন করতে ‘পনের বার’ (ভোট) লেগেছে। স্পিকার নির্বাচন করতে ‘পনের বার’ ভোট করতে হয়েছে। গণতন্ত্র কোথাও ত্রুটিমুক্ত নয়।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে কাদেরের ভাষ্য, আপনারা গুমের কথা বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যার কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে তিন–চারটি গান (বন্দুক) অ্যাটাক হয়। কত শিশু, কত মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। রাস্তা–ঘাট, মার্কেটে, এটা আপনাদের গণতন্ত্রের ওপর শুটিং নয়? এটা কি আপনাদের গণতন্ত্রের উপর আঘাত নয়? এটা কি আপনারা বন্ধ করতে পেরেছেন? অন্যদের সমালোচনা করার আগে নিজেদের ভেতরের চিত্রটাও বলুন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলে ভোট চুরি হয়েছে… ভোট চুরি হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অভিযোগ দিচ্ছে, এখনও দিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো আপনারা দেখেন না? নিজের দেশের গণতন্ত্র আগে পারফেক্ট করুন, আমরা তো বলছি না আমরা পারফেক্ট।
এ সময় আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে ক্রমান্বয়ে ‘ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র’ ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করার কথাও বলেন কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সাব–অরডিনেট অফিস ছিল নির্বাচন কমিশন, সেই নির্বাচন কমিশনকে শেখ হাসিনা আজকে আইন করে স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, রাতারাতি কিছু হবে সেটা আমরা বলছি না। আমাদের চেষ্টা আছে আমাদের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য। ক্রমাগত আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা ক্রমান্বয়ে ত্রুটিমুক্ত করছি, আমরা রিফর্ম করছি, নির্বাচন কমিশন আইন করেছি।
বিরোধীদলের কর্মসূচিতে কোথাও বাধা দেওয়া হচ্ছে না দাবি করে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের এতগুলো শান্তি সমাবেশ হলো, আমাদের কোনো মিটিং মিছিল থেকে আমরা কি বাধা দিয়েছি? তাহলে এই অবান্তর অভিযোগ আমাদের উপর কেন দেওয়া হচ্ছে? এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। বিএনপির এখন কোনো কাজকর্ম নেই। লবিস্ট নিয়োগ করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিদেশিদের দ্বারে ধরনা দিয়ে নালিশ করা–এটা হচ্ছে তাদের কাজ।