আন্তর্জাতিক খ্যাতসম্পন্ন বক্তা মাওলানা কামালুদ্দিন জাফরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যে দলটি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম বিরোধিতায় অগ্রগামী ছিল। সকল জায়গায় ইসলামের দাওয়াত ও আহ্বানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। যারা ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে আল্লাহ তাদের বরদাশত করে না। গতকাল বুধবার রাতে ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে (শহীদ রজব আলী ময়দান) ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের তৃতীয় দিনের প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশার ও মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটির সদস্য ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুসের সঞ্চালনায় আরও তাফসির পেশ করেন বায়তুশ শরফ আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. সাইয়্যেদ আবু নোমান, শিক্ষাবিদ ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, সাবেক ছাত্রনেতা আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, চবি প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, আলেমে দ্বীন মাওলানা হারুনুর রশিদ চরকানাই এবং সলিমা সিরাজ মহিলা মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মহসিন আল হোসাইনী।
প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় মাওলানা কামালুদ্দিন জাফরী বলেন, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের আজকের মাহফিলে আমার শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কথা মনে পড়ছে। প্রতিবছর তিনি এই মাঠে আলোচনা করতেন। আমিও কোনো কোনো সময় তাঁর সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছি। আল্লাহতা’য়ালা তাকে এই দাওয়াতের জন্য সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। আখেরাতে তার জন্য জান্নাতের ব্যবস্থা করে দিন। আমাদেরকে তাঁর মতো ভালো ও দ্বীনের পথে চলার তাওফিক দিন। তিনি আরও বলেন, আল্লাহতা’য়ালা ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। আওয়ামী লীগকে এর মূল্য আখেরাতে দিতে হবে। আল্লাহতা’য়ালা আমাদেরকে দাওয়াতের কাজ আরও বেশি বেশি করার তাওফিক দেন।
দ্বীন কায়েমের পথে যারা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদেরকে আল্লাহ নিরাপদ রাখুন। দ্বীনের পথ থেকে সরে যাওয়া কোনো মুমিন মুসলমানের কাজ হতে পারে না। মুসলমানের কাজ হল যত বাধাই আসুক আল্লাহর পথে দাওয়াতের কাজ তারা চালিয়ে যাওয়া। তারা এই কাজ সারাজীবন করে যাবে। তরুণ প্রজন্মকে দাওয়াতের কাজে নামিয়ে দিতে হবে।
ড. সাইয়্যেদ আবু নোমান বলেন, সকল মুসলমান ও ওলামায়ে কেরামদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া আজ সময়ের দাবি। তিনি স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাসে কোরআন ও সুন্নাহকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, আজ ফিলিস্তিনের গাজায় গণ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ওআইসি ও আরব লীগের ভূমিকা আজ প্রশ্নবোধক। তিনি বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণহত্যা বন্ধের ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বাংলাদেশকে ইসলামী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ ঘোষণার জন্যে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, আমাদের জীবনকে নবী রাসূল মুহাম্মদ (স.) আলোকে সাজাতে হবে। দেশে সংস্কৃতির নামে বিদেশি অপসংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দীন তালুকদার বলেন, যারা বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করেত চেয়েছিল, যারা মনে করেছিল আল্লামা সাঈদীকে শহীদ করে ইসলামকে দমিয়ে দেওয়া যাবে তারা মূলত বোকার স্বর্গে বাস করেছিল। তিনি মনে করেন আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করে তাফসীর মাহফিল বন্ধ করা যাবে না। কোরআনের ও ইসলামের দাওয়াত প্রদান করাই ছিল আল্লামা সাঈদীর অপরাধ।
মাওলানা হারুনুর রশিদ চরকানাই বলেন, আমাদেরকে আল্লাহর গোলামী করতে হবে কারণ পৃথিবীর রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর। দুনিয়ার বাদশা, প্রধানমন্ত্রীর গোলামী করা যাবে না। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতায় বসান আর যাকে ইচ্ছা ক্ষমতাচ্যুত করান।
আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, বীর চট্টলা ইসলামের চট্টলা, ওলামাদের চট্টলা। হায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে যৌবনকাল। এই যৌবনকাল ইবাদতের সর্বোচ্চ সময়। যৌবনকালকে ইসলামের জন্য কোরবানি করতে হবে।
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন– আইআইইউসির সাবেক প্রোভিসি প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক, মাওলানা তাজুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, কুতুব শরীফ দরবারের প্রধান শাহজাদা মাওলানা মুনিরুল মান্নান, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম, বায়তুশ শরফ আর্দশ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা অ ন ম ছলিমুল্লাহ ও মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, আব্দুস শাকুর, সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহ–সভাপতি অ্যাড. শামসুদ্দিন আহমদ মির্জা, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, আবুল হোসাইন ও ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুল হক, অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী, সাংবাদিক মুহাম্মদ উল্লাহ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, ডা. সিদ্দিকুর রহমান, মাওলানা মাহমুদুল হক, অধ্যক্ষ বদরুল হক, অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, তানজির হোসেন জুয়েল, মুহাম্মদ ইব্রাহিম রনি, মাওলানা আব্দুল হালিম, মাওলানা শিহাব উদ্দিন, মাওলান মুহাম্মদ মুছা প্রমুখ। মাহফিলে চট্টলা শিল্পী গোষ্ঠী ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।