কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে যাত্রী উঠার আগ মুহূর্তে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ‘এমভি আটলান্টিক ক্রুজ’ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহাজের এক কর্মচারী আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ঘাটে অপেক্ষারত ১৯৪ পর্যটক। আগুনে পুড়ে জাহাজটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজার সদরের নুনিয়াছটার বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি।
এ ব্যাপারে জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, এমভি আটলান্টিক ক্রুজ প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক পর্যটক পরিবহন করে আসছে। প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালেও সেন্টমার্টিনে যাত্রী তোলার উদ্দেশ্যে জেটিঘাটে ভিড়তে চেষ্টা করছিল জাহাজটি। এ সময় জাহাজটিতে হঠাৎ আগুনের শিখা দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো জাহাজে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে এর বেশ আগেই ভেতরে আগুন ধরে। আগুন দেখার আগেই ছয়জন পর্যটক জাহাজে উঠে পড়ে। তবে তারা আগুন দেখে দ্রুত নেমে পড়ে। এসময় ১৯৪ জন পর্যটক জাহাজে উঠার অপেক্ষায় ছিলেন। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ–সহকারী পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ মোরশেদ হোসেন জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে এবং দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, আগুন লাগার সময় অধিকাংশ কর্মচারী জাহাজের উপরে ছিলেন। তারা দ্রুত নেমে পড়েন। তবে জাহাজের কর্মচারী নুর কামাল (৩৫) ইঞ্জিন কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তিনি আর বের হতে পারেনি। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই কক্ষ থেকে তার পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আর কেউ হতাহত হয়নি।
আটলান্টিক ক্রুজে এই ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনায় জেটিঘাটে অপেক্ষমাণ পর্যটকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দেয়। এসময় তারা বলেন, আল্লাহ আমাদের বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। একটু পর এই দুর্ঘটনা হলে সবাই বিপদে পড়তাম।
জাহাজে আগুন ধরার খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, এটি অত্যন্ত ভয়াবহ একটি ঘটনা। অল্প কিছুক্ষণ পর ঘটলে অনেক পর্যটক বড় বিপদের সম্মুখীন হতেন– অকল্পনীয় একটি বড় দুর্ঘটনা হতো। আল্লাহ রক্ষা করেছেন, পর্যটকেরা রক্ষা পেলেন।
সেন্টমার্টিনে জাহাজ পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা তাসনিম বলেন, জাহাজটির পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন লাগার সময় জাহাজে কোনো পর্যটক ছিলেন না। ওই জাহাজের পর্যটকদের অন্য জাহাজে করে সেন্টমার্টিন পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জাহাজের কর্মচারীরা প্রাথমিক ধারণা করছেন, জেনারেটরের বিদ্যুৎ সংযোগে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনে সূত্রপাত হতে পারে। তবে স্পষ্ট কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জানান, আমরা এই ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এই ঘটনাসহ অন্য সব জাহাজে যে কোনো সমস্যা চিহ্নিত করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সাথে জাহাজগুলোর ফিটনেস যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিআইডব্লিউটিএ’র লোকজনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।












