প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে পটিয়ায় কালারপোল অহিদিয়া, চন্দনাইশে বরকল ও বান্দরবানে জামছড়ি সেতুসহ ১০০ সেতু উদ্বোধন করেছেন। এটি দেশের ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা ১০০টি সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ৮৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর বলেন, সেতুগুলো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে একটা অপূর্ণতা ছিল নড়াইলের মধুমতী নদীর দুই পাড়ের সংযোগের অভাব। সে অপূর্ণতা দূর হলো মধুমতীতে সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে এক সুতায় গাঁথা হলো সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করে দিয়েছে।
১০০ সেতু উদ্বোধনের গুরুত্ব অত্যধিক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করা সহজ হবে, পণ্য পরিবহন এবং বিপণন দ্রুত ও সহজ হবে। সেতুগুলো রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে, কারণ, এগুলো ৩৩টি রুট ফেরি পরিষেবা থেকে মুক্ত করেছে, যা সড়ক যোগাযোগকে অবাধ, দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। আমরা শান্তি চুক্তির করার ফলে ওই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থারও আমরা উন্নতি করে দিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এক সাথে এতো সেতুর উদ্বোধন এটাই প্রথম। বেইলি সেতুর বদলে পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় দুর্গম পাহাড়ের অর্থনীতি ও পর্যটন খাত আরো বিকশিত হবে। সেতু উদ্বোধন হওয়ায় মানুষ এখন থেকে সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। সেতু নির্মিত হওয়ায় পণ্য বাজারজাতকরণে সুবিধা হবে এবং উৎপাদন বাড়বে। সেতু নির্মিত হওয়ায় উন্নয়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারবে।
আজাদীতে প্রকাশিত এক উপ-সম্পাদকীয়তে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আবু নাছের বলেছেন, ‘দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এ ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ কাজ শেষ করেছে একশতটি ছোট-মাঝারি এবং বড় সেতুর কাজ।
দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন সড়ক এবং সেতু। চলছে এ নির্মাণ ও সৃজনের মহাযজ্ঞ। ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, নানান প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে সে অভিলক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে দুপাশে সার্ভিস লেনসহ চারলেনের মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে দেশের সকল জাতীয় মহাসড়ক ছয়লেনে উন্নীত করার এক সাহসী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অবিরাম কাজ করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। একের পর এক নির্মিত হচ্ছে সেতু। তৈরি হচ্ছে বিচ্ছিন্ন জনপদের মাঝে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার সেতুবন্ধ। নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জানান দিয়েছে তার সাহস এবং অর্থনীতির সক্ষমতা। দেশব্যাপী যাত্রী ও পণ্য পরিবহন উপযোগী সড়ক অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। এ অবকাঠামো আরো গতিশীল এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক করা হচ্ছে। চারলেনের মহাসড়ক থেকে একধাপ এগিয়ে মাওয়া হতে পদ্মাসেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে।’
আমরা মনে বরি, উদ্বোধনের পর নবনির্মিত একশতটি সেতুর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের অব্যাহত সাফল্যের মুকুটে যোগ হয়েছে আরেকটি হিরন্ময় পালক। এর ফলে সারা দেশের উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ হয়ে উঠবে আরও শক্তিশালী। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন দ্রুত, সহজতর ও নিরাপদ হয়ে উঠবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে যাবে দুর্গম এলাকায়।