চিরবিদায় নিলেন ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা। ফুটবলের শিল্প, সৌন্দর্য, আনন্দ, বেদনা যা কিছু বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন তার নাম দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। ফুটবলে অসংখ্যবার কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়েছেন তিনি। এবার আরো একবার কাঁদালেন। তবে এটা শেষ কান্না। ১৯৮৬ সালে বিশ্ব জয়ের আনন্দে ম্যারাডোনা যেমন বিশ্বকে কাঁদিয়েছিলেন, তেমনি ১৯৯০ সালে আশাভঙ্গের বেদনায় দিয়েগো ম্যারাডোনার সাথে আরো একবার কেঁদেছিল পুরো বিশ্ব। এবার আরো একবার কাঁদালেন পুরো বিশ্বকে। কিন্তু এবার আর কান্না করছেন না দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। কারণ তিনি এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন। ৬০ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে দিয়েগো ম্যারাডোনা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গতকাল তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
কয়েকদিন আগেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতলে। অস্ত্রোপচার হয়েছিল। আশার আলো দেখছিলেন চিকিৎসকরা। পাঠিয়েছিলেন পুনর্বাসন কেন্দ্রে। বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের আশা ছিল ফুটবল ঈশ্বর আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু কয়দিন না যেতেই এবার হার্ট অ্যাটাক করে বসলেন ফুটবল ঈশ্বর। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থেকে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিলেও এবার আর ফিরতে পারলেন না। চলে গেলেন পরপারে।
আলোচিত-সমালোচিত জীবনের অধিকারী ম্যারাডোনা ফুটবলে নিজের জানানটা দিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে। সেই থেকে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি করেছিলেন কোটি কোটি ভক্ত। ফুটবল মানেই ম্যারাডোনা- সেই বাস্তবতাটা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। ফুটবলে আকাশী-সাদা জার্সিতে নিজেকে যেমন নিয়ে গিয়েছিলেন আকাশসম উচ্চতায়, তেমনি আর্জেন্টিনা নামক দেশটিকে সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছিলেন তিনি। ফুটবলের বর্ণিল চরিত্র দিয়েগো ম্যারাডোনা দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন ৯১টি ম্যাচ। গোল করেছেন ৩৪টি। আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা ছাড়াও বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় লীগ ইতালিয়ান লীগে নাপোলির হয়ে খেলেছেন দীর্ঘদিন। খেলেছেন স্পেনিশ লিগে বার্সেলোনার হয়ে। নিজের ফুটবল জাদুর মধ্য দিয়ে নিজেকে, দেশকে, ক্লাবকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাফল্যের শিখরে। ৬০ বছরের জীবনে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা যেমন ছিল তার, তেমনি নানা বিতর্কে চাঁদের কলঙ্কের মতো কালিমা লেগেছে তার গায়ে। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে একজন দিয়েগো ম্যারাডোনা বিশ্বকে শাসন করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর শৈল্পিক ফুটবল দিয়ে। কিন্তু ৬০ বছর বয়সে চলে গেলেন তিনি। ফুটবল ক্যারিয়ারে যেমন সফল ছিলেন ম্যারাডোনা তেমনি কোচ হিসেবেও সাফল্য কম নয়। মেসিদের ডাক আউটে বসে দলকে দিয়েছেন সাফল্য। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ফুটবলকে যখন আরো অনেক কিছু দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তখন জীবন বাতি নিভে গেল তার।