একটি চুম্বন দৃশ্য এ সপ্তাহে ব্রিটিশ রাজনীতিতে যে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে এবং পরিণামে এক ডাকসাইটে মন্ত্রীর পতন ডেকে আনে, তা সব ব্রিটিশ সংবাদপত্রের রবিবাসরীয় সংস্করণের সামনের পাতা দখল করে আছে।
দুজন নারী-পুরুষের এই আবেগঘন চুম্বন দৃশ্য ধরা পড়েছিল ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সিসিটিভি ক্যামেরায়। ছবির দুই নারী-পুরুষ কোনো সাধারণ মানুষ নন, এদের একজন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক, অপরজন তার বান্ধবী ও সহকর্মী, যাকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য সান গত শুক্রবার ম্যাট হ্যানকক এবং তার সহকর্মীর এই চুম্বন দৃশ্য ফাঁস করার পর এটি ব্রিটিশ রাজনীতির প্রাণ কেন্দ্র ওয়েস্টমিনস্টারে রীতিমত ভূমিকম্প ঘটিয়ে দেয়। খবর বিবিসি বাংলার। ম্যাট হ্যানকক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী মন্ত্রীদের একজন। মহামারি শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন সরকারের অন্যতম কাণ্ডারি। মহামারি মোকাবেলায় গত ১৮ মাস ধরে যেসব নীতি এবং পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন তার জন্য বারবার তিনি ছিলেন বিতর্ক এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ জন্য বারবার তার পদত্যাগের দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগে বাধ্য হলেন শুধুমাত্র একটি চুম্বনের জন্য। এই চুম্বন কেবল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেই বিপর্যয় ডেকে আনেনি, এটি তার পারিবারিক জীবনেও সংকট তৈরি করেছে। মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি হ্যানকক তার স্ত্রীর সংসার ছেড়েও বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
ব্রিটেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য সানের গতকালের প্রথম পাতা জুড়ে একটাই শিরোনাম : ‘ম্যাট ফিনিশড’, অর্থাৎ ম্যাট হ্যানকক শেষ হয়ে গেছেন। দ্য ডেইলি মেইলের শিরোনাম : ‘হ্যানকক কুইটস হিজ জব অ্যান্ড ম্যারেজ, অর্থাৎ হ্যানকক তার চাকরি ছেড়েছেন, বিয়েও ভেঙেছেন। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর ডাউনিং স্টিট বলছিল, তার প্রতি বরিস জনসনের যথেষ্ট আস্থা আছে। হ্যানকক নিজে এই ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন। তাই ব্যাপারটা এখানেই মিটে গেছে।
কিন্তু এই ঘটনা ব্রিটিশ রাজনীতিতে এবং জনমনে এতটাই ক্ষোভ তৈরি করে যে, শেষ পর্যন্ত হ্যানকক পদত্যাগে বাধ্য হন। শনিবার লন্ডনে যেসব লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, সেখান থেকেও তার পদত্যাগের দাবি ওঠে।
ম্যাট বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। তার উপদেষ্টা জিনা কোলাডেনজেলোও বিবাহিত। ম্যাট যে পদত্যাগে বাধ্য হলেন, তার কারণ পরকীয়া নয়। নিজের তৈরি করা কোভিড লকডাউনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের অভিযোগ। হ্যানকক তার নিজের দফতরে সহকারীকে চুম্বন করেছিলেন ৬ মে। তখন পর্যন্ত ব্রিটেনে যে লকডাউন বিধিনিষেধ জারি ছিল, তাতে নিজের পরিবারের বাইরের সবার সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা। কাউকে আলিঙ্গন করা বা চুমু খাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
দলের ভেতর থেকেই এমন চাপ তৈরি হলো যে, শেষ পর্যন্ত তাকে সরে দাঁড়াতে হলো। ম্যাটের ব্যাপারটা ভিন্ন। যারা কোভিড রুল ভঙ্গ করেছিল তাদের তিনি কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু লোকে বলছে, আপনি মুখে এক কথা বলবেন আর নিজে উল্টোটা করবেন, সেটা তো চলতে পারে না। এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো জায়গা থেকে কীভাবে নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণ করা এই ভিডিও ফাঁস হলো সেটা নিয়ে চলছে জল্পনা।