২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি ও সরকারিভাবে ভর্তুকি ফি কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে সেদিন মোস্তাকিমসহ আরও অনেক কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনেরা রাস্তায় নামেন এবং বিক্ষোভ করেন।
মায়ের চিকিৎসার জন্যই রাস্তায় নেমেছিলেন মোস্তাকিম। বিষয়টি পছন্দ হয়নি পুলিশের এক সদস্যের। তিনি মোস্তাকিমকে সরে যেতে বললেন। কিন্তু মোস্তাকিম নাছোড়বান্দা। মায়ের বিষয়ে চুল পরিমাণ ছাড় দিতে চাইলেন না। দাঁড়িয়েই থাকলেন।
তাকে আটক করে থানায় নেয়া হলো। অভিযোগ আছে, মারধরও করা হয়। দেওয়া হয় ফৌজদারি মামলা। সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হলো। নিয়ে যাওয়া হয় আদালতের কাঠগড়ায়। একটু পর আদেশ হলো, আসামিকে হাজতে পাঠানো হোক। পরে অবশ্য তিনি জামিনে মুক্ত হন।
সেই মোস্তাকিমের মা নাসরিন আক্তার আর বেঁচে নেই। ২০১৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে মোস্তাকিম টিউশনি করে তার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে নগরীর একটি হাসপাতালে নাসরিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। একা হয়ে গেলেন মোস্তাকিম। তাকে আর মায়ের চিকিৎসার ভার বহন করতে হবে না। অধিকার চেয়ে রাস্তায়ও দাঁড়াতে হবে না।
আদালত সূত্র জানায়, মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে করা মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মোস্তাকিমের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আজাদীকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত চার্জশিটের ওপর এখনো শুনানি হয়নি। মোস্তাকিম ধার্য তারিখগুলোতে আদালতে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন। তিনি বলেন, মোস্তাকিমকে থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষ করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন। এটির বিরুদ্ধে মোস্তাকিম নারাজি পিটিশন দাখিল করেন। আজকে (গতকাল) এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল এবং আজকেই (গতকাল) তার মা মারা গেলেন।
তিনি বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য মার খেতে হলো, জেলে যেতে হলো। এবার তাকে হতে হলো এতিম।
মোস্তাকিমকে মানবিক আইনি সহায়তা দেওয়া আরেক আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে জানান, কিডনি রোগী নাসরিন আক্তারের পাঁচ ছেলে–মেয়ে। এর মধ্যে চারজন মেয়ে, একমাত্র ছেলে মোস্তাকিম। মাদ্রাসা পড়ুয়া তিনি। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। অপরজন প্রতিবন্ধী। আট বছর ধরে কিডনি রোগ নিয়ে পথ চলছিলেন নাসরিন আক্তার। সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস নিতেন। মোস্তাকিম টিউশনি করে তার চিকিৎসার খরচ চালাতেন।
জানা গেছে, মোস্তাকিমের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ির ধর্মপুরে। তার মাকে সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
মোস্তাকিম বললেন, মা আমাকে একা রেখে চলে গেলেন।