মোবাইল চুরি বন্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

নুরুল মুহাম্মদ কাদের | মঙ্গলবার , ৮ জুলাই, ২০২৫ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

দিনকয়েক আগে লোকাল বাসে চড়ে গন্তব্যে যাওয়ার সময় নগরীর ফলমন্ডি এলাকায় আমার হাতে থাকা ফোনটি কেড়ে নিয়ে চম্পট দেয় এক যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী। এত দ্রুত ঘটনা ঘটে যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে চোখের আড়াল হয়ে যায়। ওইসময় ছিনতাইকারীর এক সহযোগীকে ধরতে পারলেও গাড়ির হেলপার ও অন্যান্য যাত্রীরা সহযোগিতা না করায় আটকে রাখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে থানায় ডাইরি করতে গিয়ে দেখি সেখানে আমার মতো আরো অনেকেই গেছেন। বুঝতে পারলাম সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিয়মিত যাত্রীদের টার্গেট করছে। এরা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে যাত্রীবাহী বাস এবং পথচারীদেরকে টার্গেট করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মালামালসহ মোবাইল মানিব্যাগ ছিনতাই করে। আর চুরি করা মালামাল বিক্রি হয় ‘ওপেন সিক্রেট’ চোরাই মার্কেটে। নগরীর কোতোয়ালি থানার নতুন ও পুরাতন রেল স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকা এবং আশপাশের ফুটপাতজুড়ে গড়ে উঠেছে এ মার্কেট। এখানকার দোকানিদের কাছে ঠিকানা জানতে চাইলে তারা অকপটে জানায় ‘চোরাই মার্কেট’। চুরি ছিনতাই করে আনা মোবাইল চোরাই মার্কেটে নগদ টাকা দিয়ে ফেরতও পাওয়া যায়। জিনিসটা নিজের বাসা কিংবা দোকানের এমন দাবি করলে উলটো গণপিটুনি খাওয়ার আশংকা থাকে।

চট্টগ্রামের স্টেশন রোডে ট্রেন স্টেশন ছাড়াও বিভিন্ন রুটের বাসের কাউন্টার রয়েছে। এ কারণে চোর, ছিনতাইকারী বা পকেটমারের উৎপাত বেশি এ জংশনে। স্টেশন রোডের মাঝামাঝি এলাকা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এলাকা মোবাইল চোর চক্রের আখড়া। প্রতিদিন এই এলাকা থেকে অসংখ্য মোবাইল, মানিব্যাগ, গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ঝাপটাবাজরা ছিনিয়ে নিচ্ছে। কোতোয়ালি ও নিউমার্কেট মোড় এলাকা থেকে যাত্রীরা গাড়িতে উঠলেই সংঘবদ্ধ চক্রটি যাত্রীদের কিংবা সুযোগ বুঝে পথচারীদেরকে টার্গেট করে। তারা ঠেলাঠেলি করে বিশেষ কৌশলে গাড়িতে উঠেই যাত্রীদের মোবাইল, মানিব্যাগ ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে নেয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে কেউ এর প্রতিবাদ করলে সঙ্গবদ্ধ চোর চক্র উলটো প্রতিবাদকারীকেই চোর বানিয়ে দেয়।

চোরাই মার্কেটের ব্যাপক প্রসার ও পরিচিতি পায় ২০০০ সালের পরে। দেশের মোবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে জমজমাট হয়ে ওঠে বেচাকেনা। পকেটমার থেকে ছিনতাই অথবা বাসাবাড়ি থেকে চুরি যাওয়া সব মোবাইল এখানে এনে বিক্রি করা হতো। অল্প দামে মোবাইলবিক্রির কারণে দ্রুত পরিচিতি পায়। পুরাতন স্টেশন এবং নতুন স্টেশনের কয়েকশ’ মিটার এলাকার ফুটপাতজুড়ে শতাধিক দোকানে শোভা পায় হাজারো চোরাই মোবাইল। বাটন মোবাইল থেকে শুরু করে নামকরা ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন বেচাকেনা হয়। চার্জার, ক্যাবল, ব্যাটারি বা এয়ার ফোনের মতো পণ্যও এখানে বিক্রি হয়। মোবাইল চুরির পর আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তন করে বিক্রি করা হয়। সাধারণত ভিড়ের মধ্যে, বিশেষ করে গণপরিবহন যেমন বাস, ট্রেন, এবং জনসমাগমপূর্ণ স্থান শপিংমল, মসজিদ, বিয়ে অনুষ্ঠান, সভা সমাবেশে, পর্যটন এলাকা এবং মেট্রোতে মোবাইল চুরির ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

পুলিশের তথ্যানুযায়ী অক্টোবর, ২০২৪ মাসে সিএমপির চার জোনের ১৬ থানায় ২ হাজার ৬৯৭ টি মোবাইল হারানো ও ছিনতাইর অভিযোগের জিডির বিপরীতে পুলিশ প্রশাসন শুধুমাত্র ১২৯ টি মোবাইল উদ্ধার করতে পেরেছে। সংখ্যাটি মোট ঘটনার মাত্র ৪.%। এ পরিস্থিতি আমাদের সচেতন করে তোলে যে, শুধুমাত্র পুলিশ প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে আমাদের সমাজকেই সচেতন, সংগঠিত ও প্রতিরোধমূলক ভূমিকা নিতে হবে। মোবাইলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস চুরি কিংবা ছিনতাই ঠেকাতে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দলসহ সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সর্বোপরি সমাজ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মোবাইল চুরি বন্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোদের গলে পড়া বিষাদ
পরবর্তী নিবন্ধমদিনায় বাংলাদেশীদের কৃষি বিপ্লব