মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন। এ নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে একমাত্র প্রার্থী সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ২৭ নং আইন) এর ধারা ৭ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিমালা, ১৯৯১এর বিধি ১২এর উপবিধি () অনুসারে নির্বাচনী কর্তা ও নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণা মোতাবেক মো. সাহাবুদ্দিন, পিতামরহুম শরফুদ্দিন আনছারী, বাসা/হোল্ডিং৮৮/, গ্রাম/রাস্তা : শিবরামপুর, পাবনা পৌরসভা, ডাকঘরপাবনা, পোস্ট কোড৬৬০০, উপজেলাপাবনা সদর, জেলাপাবনা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হইয়াছেন।’ খবর বিডিনিউজ ও বাসসের। দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে তিনি হবেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত রোববার মো. সাহাবুদ্দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেন। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তার নির্বাচিত হওয়া ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। সিইসি বলেন, দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল একই প্রার্থীর নামে। এর মধ্যে একটি পরিপূর্ণভাবে বৈধ হওয়ায় অন্যটি আর গ্রহণের দরকার পড়েনি।

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর প্রস্তাবক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সমর্থক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মো. সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান। ব্যক্তিজীবনে তিনি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামেই বেশি পরিচিত। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে সামলেছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি, মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে সে সময় ক্ষমতা দখলকারীরা। সাহাবুদ্দিনকেও তখন কারাবরণ করতে হয়।

পেশায় আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০০১ সালে বিএনপিজামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়, যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে ‘কমিশন’ গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এই মহাসচিব বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

মো. সাহাবুদ্দিন জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসাবে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। এ ব্যাংকের অডিট কমিটিরও সদস্য তিনি। রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিয়মিত কলামও লিখতেন বিডিনিউজে। তিনি কৈশোরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম সচিব ছিলেন। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজারের পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। তবে মো. সাহাবুদ্দিন একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজন আর পড়ল না।

স্বাধীনতার পর থেকে ২১ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। সেই হিসোবে নতুন রাষ্ট্রপতি হবেন এই পদে অষ্টাদশ ব্যক্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষককে পিটিয়ে বদলি করার হুমকি অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
পরবর্তী নিবন্ধআজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে