জুয়াড়ি হোসনে আরা; নিজের এগারো বছর বয়সী শিশু কন্যার পায়ে ক্ষত সৃষ্টি করার পর পাঠাতেন ভিক্ষা করতে। পোড়া ক্ষত দেখে লোকজন টাকা দিতেন শিশুটিকে। এক ঘণ্টা পরপর শিশুটি টাকা এনে দিত মাকে। আর মা দিনরাত জুয়া খেলতেন সেই টাকা দিয়ে।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য মায়ের এমন নির্যাতনের কথা জানায় শিশুটি। এরপর আদালতের নির্দেশে মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় গত রোববার রাত দশটার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে হোসনে আরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার হোসনে আরা বেগম রাঙ্গামাটির মৃত আব্দুল খালেক ভূঁইয়ার মেয়ে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার আজাদীকে জানিয়েছেন, হোসনে আরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। নির্যাতনের শিকার শিশুটি বর্তমানে চট্টগ্রামের ফরহাদাবাদে মহিলা ও শিশু কিশোরী নিরাপদ হেফাজতিদের আবাসন কেন্দ্রে (সেফ হোম) রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৭ এ শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন হোসনে আরা। মামলায় বলা হয়, পাঁচলাইশ বদনা শাহ মাজারের সামনে থেকে তার মেয়েকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে আসামি করা হয় মেয়েটি যে বাসায় কাজ করত, সেই বাসার কর্তা রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা আলী চৌধুরীকে।
মামলাটি তদন্ত করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো উপপরিদর্শক মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী। তদন্তে নেমে পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা শিশু রাশেদা আক্তারকে উদ্ধার করে ২০২২ সালের ১ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে হাজির করেন। আদালতে শিশুটির দেয়া জবানবন্দি থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের বদনা শাহ মাজার গেটে মায়ের সঙ্গে ভিক্ষা করত সে। বেশি ভিক্ষা পেতে মা তার পায়ে পলিথিন পেঁচিয়ে পুড়িয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে দিতেন। ক্ষত দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করত সে। কিন্তু ভিক্ষায় পাওয়া টাকা দিয়ে তার মা জুয়া খেলতেন।
জবানবন্দিতে মেয়েটি আরও জানায়, তার ছোট ভাই এঙিডেন্ট করে পা ভেঙে ফেলায় চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। তখন রাশেদ ও লিমু দম্পতি তার মাকে আর্থিক সহায়তা করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়েকে রাশেদুল দম্পতির বাসায় কাজে দেন হোসনে আরা। পুনরায় ভিক্ষা করানোর জন্য রাশেদুলের বাসা থেকে আনতে গেলে মায়ের কাছে যেতে চায়নি মেয়েটি।
রাশেদ দম্পতির বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ করলেও পিবিআইর তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। আদালত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে সন্তানের পা পুড়িয়ে ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় জড়ানোর দায়ে হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে শিশু আইন ২০১৩–এর ৭১ ধারা অনুযায়ী মামলার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত বছরের ১৯ নভেম্বর পাঁচলাইশ থানার এসআই নুরুল আলম মিয়া বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলাও পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, গ্রেপ্তার হোসনে আরা বেগম একজন ধূর্ত প্রকৃতির মহিলা। সে নিজের মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে ওই টাকায় জুয়া খেলতো। সে তার মেয়েকে অপহরণ করার নামে গত বছরের এপ্রিলের শেষদিকে রাশেদ ও লিমু নামে দুইজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দেয়। যা পরে তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এক কথায় সে অহেতুক হয়রানি করে টাকা আদায়ের জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করত।