খেলার ৬২ মিনিটে ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়লেন লিওনেল মেসি। ডাক আউটে বসে যতটানা ব্যথার যন্ত্রণায় কাঁদছিলেন তার চাইতে বেশি কেঁদেছেন কোপার ট্রফি জিততে পারবে কিনা কিনা সে ভাবনায়। মেসির চোখের পানি যেন ছুঁয়ে গেল সারা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের মতো মাঠে খেলা ১১ জন সৈনিকের। যারা মেসির জন্য জীবনও দিতে পারে। শেষ পর্যন্ত মেসির মুখে হাসি ফোটাতেই যেন মনপ্রাণ উজাড় করে খেললেন আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা। আর তাতেই এলো আরো একটি সাফল্য। টানা দুইটিসহ রেকর্ড ১৬ বার কোপা আমেরিকা কাপের ট্রফি জিতল আর্জেন্টিনা।
মনোবল হারাল না আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। দেশের হয়ে বিদায়ী ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। তবুও তাদের সঙ্গে সমান তালেই লড়াই করছিল কলম্বিয়া। শেষ সময়ে তাদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিলেন লাউতারো মার্তিনেস। ছন্দে থাকা স্ট্রাইকারের নৈপুণ্যে হামেস রদ্রিগেসের দলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা ধরে রাখল লিওনেল স্কালোনির দল। ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে কলম্বিয়ার ২৮ ম্যাচের অজেয় যাত্রা থামিয়ে ১–০ গোলে জিতল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এ নিয়ে চার বছরের মধ্যে তিনটি বড় ট্রফি ঘরে তুলল মেসিরা।
২০২১ কোপা আমেরিকার পর ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ। আর এবার ২০২৪ কোপা আমেরিকা। লাতিন আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে টানা তিনটি বড় শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। ইউরোপে এই অর্জন আছে শুধু স্পেনের। ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরো জয়ের মাঝে তারা ২০১০ সালে জিতেছিল বিশ্বকাপ। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে তিন বছরে বিশ্বকাপ ও দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। এবার তিন আসরের তিনটি ট্রফিই ঘরে তুলল তারা। মাঝে টানা ২৮ বছর কোনো শিরোপার স্বাদ না পাওয়া দলটি এবার চার বছরে পেল তিনটি সাফল্য। ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালের পর লাতিন আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে জিতল টানা দুই শিরোপা।
টিকেটবিহীন দর্শকদের উপদ্রবে দুই দফা পিছিয়ে নির্ধারিত সময়ের ৮০ মিনিট পর শুরু হয় খেলা। ম্যাচের প্রথমার্ধে দাপট দেখায় কলম্বিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা। বাকি সময় কলম্বিয়াকে চাপে রাখলেও মূল ম্যাচে গোলের দেখা পায়নি তারা। খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে ৯৭তম মিনিটে হুলিয়ান আলভারেসের জায়গায় লাউতারোকে নামান লিওনেল স্কালোনি। ১৫ মিনিটের মধ্যেই দুই দলের ব্যবধান গড়ে দেন ছন্দে থাকা ২৬ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। দারুণ এক গোল করে আর্জেন্টিনাকে আরেকটি শিরোপা জিতিয়ে দিল মার্তিনেস। শুরুটা অবশ্য ভালো করেছিল আর্জেন্টিনাই। প্রথম মিনিটে গনসালো মন্টিয়েলের ক্রসে ডি–বঙের মাঝে বল পেয়ে যান হুলিয়ান আলভারেস। কিন্তু তার ডান পায়ের শট বাম পাশ দিয়ে চলে যায় বাইরে। এরপর প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে কলম্বিয়ার দাপট। পঞ্চম মিনিটে ডি–বঙের বাইরে থেকে বাম পায়ের শট নেন লুইস দিয়াস। নিচু হয়ে গ্লাভসে নেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। এক মিনিট পর ডি–বঙের ভেতর থেকে হন কর্দোবার শট দূরের পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। এরপর আরও দুই দফা আর্জেন্টিনার রক্ষণে হানা দেয় কলম্বিয়া। পঞ্চদশ মিনিটে ফ্রি–কিক পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর মারেন রদ্রিগেস। ২০ মিনিটে বড় সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। জায়গা বদলে বাম পাশে চলে আসেন ডি মারিয়া। তার ক্রস ডি–বঙে পেয়ে বাম পায়ের শট করেন মেসি। কিন্তু আলভারেসের পায়ে লেগে গতি হারায় বল। ফলে সহজেই ঠেকিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক কামিলো ভার্গাস।
বিরতির পর একই গতিতে চলতে থাকে খেলা। ৪৭ মিনিটে কর্দোবার ফ্লিকে বল পেয়ে ডি–বঙের ডান পাশ থেকে আরিয়াসের ডান পায়ের শট অল্পের জন্য দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটে ডি–বঙের মধ্যে দারুণ জায়গায় পান আলেঙিস মাক আলিস্তের। কিন্তু শট করতে পারেননি তিনি। তার আলতো টোকায় বল পেয়ে জোরাল শট করেন ডি মারিয়া। খুব কাছ থেকে রুখে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক। ৭৫ মিনিটে ডি–বঙের ভেতর থেকে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান গনসালেস। কিন্তু তাকে পাস দেওয়া তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। ৮৮ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে উড়ে আসা বলে গনসালেস যে হেড নেন তা চলে যায় বাইরে। এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই সময়ের তৃতীয় মিনিটে ডি মারিয়ার কর্ণার কিক থেকে ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর মাথা ঘুরে বল পান গনসালেস। কিন্তু তার শট চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। ৯৪তম মিনিটে ডান দিক থেকে ডি–বঙের মাঝে ক্রস দেন রদ্রিগো ডি পল। গনসালেসের ডান পায়ের শট ডানে ঝাঁপিয়ে ঠেকান ভারগাস। অবশেষে ১১২ মিনিটে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। জিওভানি লো সেলসোর থ্রু বাড়ানো বল ধরে ডি–বঙে ঢুকে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান লাউতারো মার্তিনেস। চলতি কোপা আমেরিকায় এটি তার পঞ্চম গোল। আর সে গোলেই টানা দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা কাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা।