মেলার স্থায়ী ভেন্যুর জন্য শীঘ্রই জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবে

পলোগ্রাউন্ডে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনে তথ্যমন্ত্রী উৎসবে পণ্যের দাম কম নেয়ার সংস্কৃতি চালু হোক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পৃথিবীর সব দেশে দেখতে পাই, যখন উৎসব হয় তখন পণ্যের দাম কমে। আমাদের দেশে যখন উৎসব হয় তখন পণ্যের দাম বাড়ে। সেটি ঈদ হোক, পূজা হোক। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দাম কম নেয়ার মানসিকতা থাকা উচিত। এফবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম শিল্প বণিক সমিতি যদি ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেন অথবা যারা কম দাম রাখবে তাদের প্রয়োজনে পুরস্কার দেয়া দরকার। আমরা চাই, আমাদের দেশে সংস্কৃতিটা চালু হোক। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর পলোগ্রাউন্ড মেলা প্রাঙ্গণে ৩০তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

. হাছান মাহমুদ বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে এ মেলার আয়োজন চলছে। ঢাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা সরকারের তত্ত্বাবধানে হয়। চট্টগ্রামে সরকার সহযোগিতা করে, কিন্তু মেলার আয়োজন করে চট্টগ্রাম শিল্প বণিক সমিতি। চট্টগ্রামে মেলার স্থায়ী ভ্যানু দরকার। এটা দীর্ঘদিনের দাবি। খুব তাড়াতাড়ি আউটার রিং রোডের বে টার্মিনালের উল্টোপাশে মেলার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি ও তাদের দোসররা পদ্মা সেতু দিয়ে ওপারে গিয়ে জনসভা করে বলেন, দেশে কোনো উন্নয়ন হয় নাই। অথচ তারা পদ্মা সেতুর ওপর দিয়েই গেলেন। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলেন কিছুই হয় নাই। যাদের চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির তাদেরকে কেউ আলোও দিতে পারবে না, শ্রবণশক্তিও দিতে পারবে না। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করেছে এবং সব ব্যবসায়ীর সমৃদ্ধি হয়েছে। দেশের সমৃদ্ধির সাথে সাথে প্রত্যেকটি ব্যবসায়ীর সমৃদ্ধি এসেছে। আপনারা যদি নিজের কাছে প্রশ্ন করেন ১৪ বছর আগে আপনার ব্যবসার কি ব্যাপ্তি ছিল, এখন ব্যাপ্তি কোথায়। আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার। আজকে সেটি পৌনে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় ছিল ৬শ ডলার, সেটি ২৮শ ডলারের ওপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে আইএমএফের প্রাক্কলন অনুযায়ী আমরা মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়েছি। মানব উন্নয়ন সূচক, অর্থনৈতিক সূচক, সামাজিক সূচক ও স্বাস্থ্য সূচকসহ সমস্ত সূচকে অন্তত সাত বছর আগে আমরা পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি। মানব উন্নয়ন সূচক, সামাজিক সূচক এবং স্বাস্থ্য সূচকে আমরা ভারতকেও অতিক্রম করেছি। অর্থনৈতিক সূচকে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে ২০২১ সালে আমরা ভারতকে অতিক্রম করেছি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সমালোচনাকে আমি ভয় পাই না। সমালোচনা আমাকে সংযত করে। আমার বিরুদ্ধে সমালোচনা হলে আমি খতিয়ে দেখি, আমার ভুল কোথায়। ভুলটা খুুঁজে নিয়ে আমি সংশোধন করার চেষ্টা করি। কিন্তু শুধু সমালোচনা করলে তো হবে না, ভালো কাজ যে হয়, সেগুলো তো একটু বলা দরকার। সমালোচনা যারা করেন, তারা সমাধান তো দেখিয়ে দিতে পারেন না। কী কাজ করলে সমাধান সম্ভব। জামার সেলাই ভালো হয়নি, এক হাত লম্বা আরেক হাত বেটে, কিন্তু কিভাবে সেলালে জামাটা সুন্দর দেখাবে সেটি দেখান।

চট্টগ্রাম১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, আমাদের চট্টগ্রামে যে মেলাগুলো হয় এটি ভিন্ন একটি মেলা। এখানে সব পণ্য প্রদর্শন করা হয়। ব্যবসায়ীরাও এ মেলার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন। আজকে সরকার দেশের ব্যবসা বাণিজ্য অর্থনীতিকে নতুন রুপে সাজানোর জন্য তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কিছু অদক্ষ কর্মকর্তার কারণে ট্যাঙ ফাঁকি হচ্ছে। কাজেই তাদেরকে শিখতে হবে প্রতিনিয়ত। ৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর। এ জন্য দেশকে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কোন বিকল্প নেই। সিটি করপোরেশনকে আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটির উন্নয়নের জন্য। পুরোদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৫ শতাংশ উন্নয়ন কাজ চলছে চট্টগ্রামে।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। দেশের শিল্প এবং রপ্তানির বিকাশে বাণিজ্যমেলার আয়োজন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পণ্য তুলে ধরা সম্ভব। মেলা মানে একটি মিলনমেলা, একটি উৎসব। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম আর কঙবাজারের উন্নয়নের কাজ দেখে মাঝে মাঝে আমার হিংসা হয়। এগুলো বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম তথা গোটা দেশ আরো এগিয়ে যাবে। কয়েক লক্ষ কোটি টাকার প্রজেক্ট এই চট্টগ্রামে। আমি মনে করি স্পেশাল ইকোনমিক জোন চালু হলে আমরা অন্যরকম এক বাংলাদেশকে দেখবো।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত তিন দশক যাবত চট্টগ্রাম বাণিজ্য মেলা চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি নিখাদ বিনোদনের উৎস ও মিলন মেলায় রূপ নিয়েছে। তিনি বেসরকারী খাতের উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন, আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ধরণের অনুমোদন চট্টগ্রাম থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা করা, রপ্তানি বহুমূখীকরণের জন্য নতুন ক্ষেত্র, উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করে চলমান প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এবং মেলা কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম আকতার হোসেন। এছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালক ও মেলা কমিটির কোচেয়ারম্যান মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। মাসব্যাপী এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পলোগ্রাউন্ডে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাণিজ্যমেলার বাইরে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি
পরবর্তী নিবন্ধনতুন শিক্ষাক্রমে ৫ দিনই হবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান : শিক্ষামন্ত্রী