মেয়াদ ফুরানোর মাত্র দেড় মাস আগে ৭৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৭৫ টাকার প্রাকৃতিক মধু আগামীকাল প্রকাশ্য নিলাম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অথচ এসব মধু আমদানি হয় গত ২০২৩ সালে। আমদানিকারক নির্দিষ্ট সময়ে খালাস না নেয়ায় ১ হাজার ৩৯০ কার্টনে ভর্তি ৮ হাজার ৩৪০ কেজি মধু গত বছরের শুরুর দিকে একবার নিলামে উঠানো হয়। তখন রফিক অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ দরদাতা যথা সময়ে পণ্য খালাস না নেয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করে। এরপর দীর্ঘ সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব মধু নিলামে না তুলে, মেয়াদ ফুরানোর মাত্র দেড় মাস আগে নিলামে তোলায় বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিডারদের দাবি–নিলামের স্থায়ী আদেশ মেনে যদি এসব মধু পুনরায় নিলামে তোলা হতো, তবে ভালো দামে বিক্রির পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ঝুঁকিও থাকতো না।
চট্টগ্রাম কাসটমস সূত্রে জানা গেছে, নিলামের স্থায়ী আদেশে বলা হয়েছে– নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নিলাম কমিটির সুপারিশ পাওয়ার ৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনার কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করবেন। এছাড়া অনুমোদনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিক্রয় আদেশ দিতে হবে। যৌক্তিক কারণে কমিশনার আরো ৫ কার্যদিবস বাড়াতে পারবেন। অপরদিকে বিক্রয় আদেশ কাস্টম হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দরমূল্যের প্রযোজ্য হারে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া দরমূল্য প্রাপ্তির ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনার অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক বিডারের অনূকুলে ডেলিভারি অর্ডার ইস্যু করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য চালান খালাস করলে বিক্রিত পণ্যের কোনো গুদাম ভাড়া প্রযোজ্য হবে না। যদি বিডার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস নিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেক্ষেত্রে তিনি কারণ উল্লেখ করে কমিশনারের নিকট সময় বৃদ্ধির আবেদন করবেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিশনার অতিরিক্ত ৭ দিন পর্যন্ত সময় বাড়াতে পারবেন। রাসায়নিক পরীক্ষা কিংবা অন্য শর্ত প্রতিপালনের বিষয় থাকলে কমিশনার যৌক্তিক সময় বাড়াতে পারবেন। বর্ধিত সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস না নিলে অনুমোদন ছাড়া সময়ের জন্য গুদাম ভাড়া দিতে হবে এবং ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বিক্রয় আদেশ বাতিল করবেন কমিশনার। এছাড়া জামানতের টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিডাররা বলছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলামে স্থায়ী আদেশ না মেনে পণ্য নিলামে তুলছে। এছাড়া পণ্য অনুমোদনে প্রচুর সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার ৭৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৭৫ টাকার মধু নিলামে তোলা হচ্ছে। এই মধু উৎপাদনের তারিখ ছিল ২৭ মার্চ ২০২৩ ইং এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ হচ্ছে আগামী ২৬ মার্চ ২০২৫ ইং। অর্থাৎ নিলামের তারিখ হিসাব করলে এসব মধুর মেয়াদ আছে আর মাত্র ৪৮ দিন। নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা এবং পণ্যের অনুমোদন পেতে কিছুদিন সময় ব্যয় হতে পারে। এরপরে এই বিশাল পরিমাণ মধু বাজারজাতকরণেও যথেষ্ট সময় লাগতে পারে। তাই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যদি অন্তত এক বছর আগে এসব মধু পুনরায় নিলামে তুলতো তবে সব পক্ষের উপকার হতো। এখন বাজারজাতকরণ পর্যায়ে এ পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দেশের বাজারে মধুর চাহিদা হিসাব করলে এত কম সময়ে এই পরিমাণ মধু বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা না। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে কন্টেনারে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে পণ্য। তাই এসব পণ্য ধ্বংস করা ছাড়া উপায় থাকে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ২০২৩ সালের পণ্য এতদিন পর প্রকাশ্য নিলাম হওয়ার তো আসলে কথা না। আসলে আমি ফাইল (নথি) না দেখে বলতে পারছি না। যেহেতু মেয়াদ খুব বেশি দিন নাই, এখন কোনো বিডার যদি এসব মধু নিলামে পেয়ে থাকেন, আবার যদি পরীক্ষা করেও নিতে হয়, তাহলে সেই পণ্য প্রয়োজনে খালাস হবে না।