মেডিকেল বর্জ্য না পুড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ভাঙারির দোকানে!

পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে জব্দ ৪৩ বস্তা, তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগরের চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’ নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি আছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। চুক্তি অনুযায়ী, শহরের সরকারিবেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিদিনের বর্জ্য সংগ্রহ করে তা নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্থানে ইনসিনারেটরের মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। কিন্তু সংগৃহীত ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য না পুড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ভাঙারির দোকানে!

যার সত্যতা মিলেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে। গত মঙ্গলবার রাতে পরিচালিত ওই অভিযানে বন্দর থানার ৩৮নং ওয়ার্ডস্থ আনন্দবাজার টিজি কলোনি এলাকার একটি ভাঙারির দোকান থেকে জব্দ করা হয় ৪৩ বস্তা চিকিৎসা বর্জ্য। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ধারণা, ওসব বর্জ্য রিসাইক্লিং কারখানায় সরবরাহ করা হয়। যা পরবর্তীতে আবারও হাত ঘুরে বাজারে আসতে পারে। যা মারাত্বক ঝূঁকিপূর্ণ চিকিৎসাবর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ পরিপন্থী। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মুহম্মদ আশফাকুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল বন্দর থানায় ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’ এর স্বত্বাধিকারী মো. জমির উদ্দিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অন্য দুই আসামি হচ্ছেন ভাঙারি কারখানার মালিক মো. তৈয়্যব ও কারখানাটির কর্মচারী মো. তানভীর। এর মধ্যে তানভীরকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে পরিবেশ অধিধপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে অংশ নেন সংস্থাটি নগর কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক, সিনিয়র কেমিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মেদ ও পরিদর্শক মুহম্মদ আশফাকুর রহমান এর সমন্বয়ে একটি টিম। মিয়া মাহমুদুল হক আজাদীকে বলেন, অভিযানে কারখানাটি হতে ব্যবহৃত, সংক্রমিত সিরিঞ্জ, সুঁচ, ক্যানোলা, স্যালাইনের বোতল, নল, সংক্রমিত প্লাস্টিক বর্জ্য, কালো ও হলুদ রঙ্গের পলিথিন ইত্যাদি জব্দ করা হয়। কারখানাটিতে এসব সংক্রমিত, ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা বর্জ্য যত্রতত্র, খোলা ও অনিরাপদ অবস্থায় মজুদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণরত অবস্থায় দেখা যায়। অভিযানকালে ভাঙারি দোকানের মালিক মো. তৈয়বকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় নি। তবে চিকিৎসা বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকৃত অবস্থায় দোকানের কর্মচারী মো. তানভীরকে হাতে নাতে আটক করে থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয় ।

এ কর্মকর্তা বলেন, জব্দকৃত আলামত ও স্থানীয় তদন্তে জানতে পারি, আনন্দবাজারস্থ সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং সাইট হতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসাবর্জ্য সংগ্রহ করে ওই ভাঙারি দোকানে মজুদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ পরিচালিত হত।

তিনি বলেন, কঠিন চিকিৎসা বর্জ্য পরিবেশসম্মত পন্থায় বিনষ্টকরণের জন্য আনন্দবাজার ডাম্পিং সাইটের পাশে জাইকার অর্থায়নে একটি অত্যাধুনিক ইনসিনারেটর প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে প্লান্টটি পরিচালনা করছেন। নগরের হাসপাতালগুলো হতে কঠিন চিকিৎসাবর্জ্য সংগ্রহ ও ইনসিারেটর প্লান্টে পরিবহনের কাজটি করে ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’। প্রতিষ্ঠানটি হাসপাতালগুলো থেকে হলুদ ও কালো রঙয়ের পলিথিনে করে চিকিৎসাবর্জ্য সংগ্রহ করে থাকে। তৈয়ব এর ভাঙারি দোকান থেকে হলুদ ও কালো রঙের এসব পলিথিন জব্দ করা হয়। এতে প্রতীয়মান হয়, ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা কর্তৃক সংগৃহীত চিকিৎসা বর্জ্য প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় উক্ত ভাঙারির দোকানদারের নিকট বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ হাসপাতালগুলো থেকে সংগৃহীত কঠিন চিকিৎসাবর্জ্য ইনসিনারেট প্লান্টে না দিয়ে অবৈধ পন্থায় ভাঙারির দোকানে বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয় তদন্তেও এর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় ।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সেবা সংস্থাকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ একই এলাকার অন্য একটি ভাঙারির দোকান থেকে ৩ টন চিকিৎসা বর্জ্য জব্দ করা হয়। ওই সময় চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার মালিক এবং ওই ভাঙারি দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এর আগে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করে।

পরিবেশ অধিপ্তরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক আজাদীকে বলেন, ভাঙারির দোকান থেকে চিকিৎসা বর্জ্য রিসাইক্লিং কারখানায় দেয়ার সম্ভাবনা আছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব খারাপ হবে।

জানা গেছে, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের দুই ধরনের চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি করা হয়। এগুলো হচ্ছেপুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও পুনঃচক্রায়নযোগ্য বর্জ্য। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ (সিন্ডিকেটের অংশ) পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য যেমন, ব্যবহৃত কাচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও রাবার/প্লাস্টিক নল নষ্ট না করে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহকারীর (সিন্ডিকেটের অংশ) কাছে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিক্রি করে দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমির মালিক হওয়া যাবে না : ভূমিমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধঅবশেষে বন্ধকী ১০৪ কেজি স্বর্ণ ফেরত পাচ্ছেন ৬১ দোকানি