সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অনেক জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘরগুলো ভেঙে পড়া, ফাটল তৈরি হওয়া কিংবা নিম্নমানের কাজ হওয়া নিয়ে নানান সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সমালোচনার বাইরে নেই চট্টগ্রামও। তবে ভেঙে না পড়লেও কাজে নিম্নমানের অভিযোগ রয়েছে পটিয়া উপজেলায় হস্তান্তর করা প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারমূলক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নিয়ে।
অধিকাংশ ঘরের ভেন্টিলেটর ভাঙা, কোনোটির মেঝেতে ফাটল। তাছাড়া ঘরগুলোর ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়েছে অতি নিম্নমানের কাঠ, জানালার গ্রিলে নিম্নমানের টিন। সবগুলো ঘর বাইরে রং করলেও কিছু কিছু ভেতরে রং নেই। আবার কিছু জানালা বাইরে রং করলেও ভেতরের অংশে মরিচা ধরেছে। করা হয়নি পানীয় জলের ব্যবস্থাও। তাই মাসখানেক আগে ঘর পাওয়া মানুষের দুর্ভোগেরও অন্ত নেই। তবে ঘরগুলোর বাইরের দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। ঘরগুলোতে সাঁটানো নীল, সবুজ রংয়ের ঢেউটিনগুলো পাহাড়ি এলাকাটিকে রঙিন করেছে। শনিবার পটিয়ার উপজেলার সরেজমিনে গেলে এসব অনিয়ম চোখে পড়ে। এসময় আশপাশের স্থানীয়রা এ ঘরগুলোর কাজকে ‘উপরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট’ বলেই মন্তব্য করেন।
ইতোমধ্যে ২৩০টি ঘরের মধ্যে ২০০টি ভূমি রেজিস্ট্রিসহ ভূমিহীন মানুষের হস্তান্তর করা হয়েছে। বসবাস শুরু করেছেন ঘর পাওয়া মানুষ। প্রত্যেকে দুই শতক জমির উপর নির্মিত এসব ঘরের মালিক হবেন। প্রতিটি ঘরের সঙ্গে রয়েছে রান্না ঘর, দুইটি থাকার ঘর, একটি বাথরুম ও ঘরের সম্মুখে খালি জায়গা।
সরেজমিনে কথা হয় ঘর পাওয়া ভূমিহীন বিবি জয়নাবের সঙ্গে। ১৫৫/১১৮ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন তিনি। বিবি জয়নাব ফাটল ধরা ঘরের ফ্লোর দেখিয়ে বলেন, ‘বড় ফাইট (ফাটল) হওয়ায় ঠিক করে দিয়েছেন। এখন কিছু কিছু ফাটল দেখা যাচ্ছে।’ আবদুল মোতালেবের স্ত্রী রোজি আকতার বলেন, ‘ঘরে ফাটল শুরু হয়েছে। ফাটলগুলো তারা (ঠিকাদারের লোক) ঠিক করে দিয়ে যাচ্ছে।’ আরেক মহিলা বলেন, ‘আমাদের ঘর ছিল না। এখন ঘর পেয়ে খুশি হয়েছি। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কয়েকদিন আগে মিটার লাগিয়েছে, এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ লাগেনি। পুরো ঘরের ফ্লোর সবই ফাটা।’ ঘর পাওয়াদের অনেকেই বলেন, ‘এখানকার ঘরগুলো নতুন হলেও পানির ব্যবস্থা নেই। অনেক দূরে গিয়ে পাশের গ্রাম থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগেনি। গরমে ঘরগুলোতে বাস করা কঠিন। তাছাড়া অনেক ঘরে বাথরুমের দরজাগুলোও লাগানো হয়েছে উল্টো করে। কয়েকটি ঘরে বৃষ্টিতে ছাউনি দিয়ে পানিও ঢুকছে।’
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এ ধরণের ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। পটিয়া উপজেলায় ২৩০ টি ঘর রয়েছে। তন্মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬০টি, বাকীগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে পটিয়ার সাপমারা গুচ্ছগ্রাম ও হাইদগাঁও পাহাড়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ২০০ ঘরের প্রতিটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পরের ৩০টির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মো. আকবর নামে আনোয়ারা উপজেলার সরকারি দলের এক ঠিকাদার প্রথম ৩০টি ঘরের নির্মাণ কাজ করেন। পরে পটিয়ার সরকারি দলের মাহদু ৪০টি, এনাম মজুমদার ৮০টি ও মো. হাসান ৫০টি ঘর নির্মাণ কাজ পান। গত ৫ জুলাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল নির্মাণনাধীন ঘরগুলো পরিদর্শন করেন। ওইদিন তিনিও ফ্লোর ফাটলের বিষয়টি অবহিত হন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে জানতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মুজিব বর্ষে ভূমিহীনদের দেওয়া ঘরগুলো প্রধানমন্ত্রীর ঘর হিসেবে পরিচিত। এগুলো নির্মাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ঘরগুলো তৈরি হলেও লোকজন না উঠায় এতোদিন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ না যাওয়ায় পানির ব্যবস্থাও করা সম্ভব হয়নি। এখন লোকজন ঘরগুলোতে উঠেছে, প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। পানির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ঘরগুলোতে উঠা লোকজন থেকে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুততম সময়ে তা সমাধান করে দিচ্ছি।