মেঘনা পেট্রোলিয়ামের অনিয়ম তদন্তে বিপিসি

ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম এবং ভোক্তাদের নিম্নমানের জ্বালানি সরবরাহসহ মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বিরুদ্ধে উঠা নানা অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। পাশাপাশি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে কোম্পানি সচিব করার বিষয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজ করেছেন বিপিসির সচিব মো. লাল হোসেন।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়ামের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপো আকস্মিক পরিদর্শন করে নিম্নমানের জ্বালানি সরবরাহের বিষয় জানতে পারে বিপিসির তদন্ত দল। ডিপো পরিদর্শন শেষে তদন্ত টিম বিপিসিতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয়। এরপর গত ১১ নভেম্বর বিপিসির সচিব মো. লাল হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক পত্রে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের গোদনাইল ডিপো ইনচার্জ ম্যানেজার (অপারেশন) মো. লুৎফর রহমান, ফতুল্লা ডিপো ইনচার্জ ম্যানেজার (অপারেশন) আশফাক উল হককে শোকজ করেন। পরবর্তীতে গত ১২ নভেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পতেঙ্গার গুপ্তখালস্থ প্রধান স্থাপনা (এমআই) থেকে ৮শ মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘এমটি ওশান স্টার’ জাহাজ ভর্তি করে ফার্নেস অয়েল পাঠানো হয় রাজশাহী বিভাগের জেলা সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টে। ১৮ নভেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফার্নেস অয়েল গ্রহণ করার আগে ল্যাবের পরীক্ষায় মান মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত পানির অস্তিত্ব পায়। এরপর বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ফার্নেস অয়েল গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেয়। এনিয়ে দৈনিক আজাদীতে ১৮ নভেম্বর ‘দেশজুড়ে নিম্নমানের জ্বালানি নেটওয়ার্ক!’ ও ৬ ডিসেম্বর ‘৮শ মেট্রিক টনের জাহাজ ফেরাল সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র; মেঘনার ফার্নেস অয়েলে মাত্রাতিরিক্ত পানি থাকার অভিযোগ’ শীর্ষক বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাছাড়া মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সংগঠিত নানা অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেন প্রতিষ্ঠানের একটি অংশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযোগে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সম্পর্কে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কোম্পনিতে নিয়োগবিধি ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এজিএম (গ্রেড-২) সবচেয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা রেজা মো. রিয়াজ উদ্দিনকে ডিজিএম (গ্রেড-১) পদমর্যাদার কোম্পানি সেক্রেটারি করা হয়। অন্যদিকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এজিএম (এমআই) পদে ডিপো ম্যানেজার মুজিবুর রহমান চৌধুরীকে পদোন্নতি দেওয়া হলেও একই কর্মস্থলে রাখা হয়েছে। তিনি ২৫ বছর ধরে প্রধান স্থাপনাতে (পতেঙ্গা গুপ্তখাল) কর্মরত রয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ম না মেনে অস্বাভাবিক দ্রুততায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগও উঠে আসে তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ভোক্তাদের নিম্ন মানের জ্বালানি সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৩ জানুয়ারি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-৩ অধিশাখা) মোর্শেদা ফেরদৌস স্বাক্ষরিত এক পত্রে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এসব অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিপিসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১৭ জানুয়ারি বিপিসির সচিব মো. লাল হোসেন ও সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজারকে (নিরীক্ষা) ইউসুফ হোসেন ভূঁইয়াকে অভিযোগটি তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক।
এদিকে বিপিসির সচিব মো. লাল হোসেন গত ১৮ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত একপত্রে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ছাইফুল্লাহ আল খালেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, এজিএম (এইচ আর) রেজা মো. রিয়াজ উদ্দিনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোম্পানি সচিব হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে আনীত একটি অভিযোগ বিপিসির পরিচালক (অর্থ) কর্তৃক তদন্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে কোম্পানি সচিব পদে দায়িত্ব প্রদানের জন্য সমপর্যায়ের যোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান নিয়োগবিধি অনুসরণ না করে এবং কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি বা সিদ্ধান্ত না নিয়ে রেজা মো. রিয়াজ উদ্দিনকে উচ্চতর পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের আদেশ দানকে বিধিবহির্ভূত ও প্রশ্নবিদ্ধ মর্মে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে ওই পত্রে।
এ বিষয়ে বিপিসির সচিব (সরকারের উপসচিব) মো. লাল হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এখন সরকারি কর্মকর্তাদের সার্ভিস রুলস আছে। আমি স্পোকসম্যান নই।’ এ ব্যাপারে জানতে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর সাইফুল্লাহ আল-খালেদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সদুত্তর মেলেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনের নামে সরকার ‘অনির্বাচিত প্রতিনিধি’ বাছাই করছে
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাই এখন বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন