বিভিন্ন উৎসব ও ছুটিতে দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় থাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ সময় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কাপ্তাইয়ে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় জমে। প্রতিবারের মতো এবার ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতেও দেখা গিয়েছে একই চিত্র। গত দুবার করোনা মহামারীর কারণে নানা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এবার তা নেই। তাই এ অঞ্চলগুলোতে এবার পর্যটকদের ভিড় তুলনামূলক একটু বেশি।
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাঙামাটিতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে হ্রদ–পাহাড়ের শহর রাঙামাটি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের জন্য মনোমুগ্ধকর কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, পুলিশ পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলো, রাজবন বিহার, বার্গী টুরিস্ট স্পট। জানা গেছে, বর্তমানে শহরের সরকারি রেস্ট হাউজ থেকে শুরু করে আবাসিক হোটেলগুলোতে রয়েছে প্রায় ৬০–৭০ ভাগ বুকিং।
চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা কলেজ ছাত্র দিশান বলেন, আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে রাঙামাটি ঘুরতে এসেছি। এখানকার লেক, সবুজ পাহাড় খুবই সুন্দর। চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা তরুণী দীপা বড়ুয়া ও স্মৃতি সুত্র ধর বলেন, কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দূশ্য, ঝুলন্ত সেতু, সবুজ পাহাড় দেখে আমরা খুবই অভিভূত। প্রকৃতির রুপ যে এত সুন্দর হতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগে।
রাঙামাটি পর্যটন নৌযান ঘাট ম্যানেজার মো. রমজান আলী জানান, দুই বছর করোনার কারণে পর্যটকরা আসতে পারে নাই। তবে এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকরা রাঙামাটিতে বেড়াতে আসছেন এবং নৌ ভ্রমণও করছেন।
খুলনা থেকে পরিবার–পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসা মো. আসাদ বলেন, আমরা এ প্রথমবার রাঙামাটিতে ঘুরতে এসেছি। ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক , লেক অনেক জায়গায় ঘুরলাম খুবই ভাল লাগছে।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে হোটেল–মোটেলগুলোর ৭০ ভাগ রুম বুকিং রয়েছে।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান এখন অন্যতম। ছুটি মানেই ভ্রমণ পিপাসুদের উপচে পড়া ভিড় জমে জেলার দর্শণীয় পর্যটন স্পটগুলোতে। গতকাল শুক্রবারও ব্যতিক্রম ছিলো না। প্রকৃতির নির্মল ছোয়ায় পাহাড়ের চোখ জুড়ানো দর্শণীয় স্থান নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, নীল দিগন্ত, তমাতুঙ্গী, ডিম পাহাড়, বগালেক, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, দেবতাকুমসহ পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। হাজার হাজার পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রকতি এবং শৈল্পিক ছোয়ায় সাজানো দর্শণীয় স্থানগুলো। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউজ কোথাও কোনো রুম খালি নেই। দূর–দূরান্তে ভ্রমণকারীরা পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়িদের মাচাংঘরগুলোকে থাকার বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
ভ্রমণকারী পর্যটক সাজ্জাদুর রহমান ও সানজিদা বলেন, পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আমরা সত্যিই মুগ্ধ। দার্জিলিং ভ্রমণে গেছি কয়েকবার। কিন্তু বান্দরবান না এলে বুঝতেই পারতাম না, আমার দেশটা আরও কতটা সুন্দর। সাজানো গোছানো বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, চিম্বুক পাহাড়ের দর্শণীয় স্থানগুলোয় খুবই চমৎকার। আমাদের মত ভুল না করে, আগে সবাইকে নিজের দেশ ভ্রমণের আহ্বান জানাচ্ছি।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক জামিল আহমেদ, সোহানা ও ফারজানা বলেন, পর্যটকরা পাহাড়ের দর্শণীয় স্থানগুলোতে নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু বৃষ্টি আমাদের ভ্রমণ আনন্দে কিছুটা ভোগান্তি বাড়িয়েছে। তবে পাহাড়ে মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখার সুভাগ্যও হয়েছে বৃষ্টির সুবাদে। খারাপ ভালো মিলে ঈদের ট্যুরটা ভালো কাটলো।
এদিকে বান্দরবান জেলায় ভ্রমণ পিপাসুদের বাড়তি চাপে পর্যটক হয়রানি বন্ধে প্রশাসন, আইন–শৃক্সখলা বাহিনী এবং হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা নজরদারি বাড়িয়েছে সবখানে। পর্যটকদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। বাতিল করা হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সব কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ছুটিও। প্রশাসন পরিচালিত পর্যটন স্পটগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পোশাক পরিহিত পর্যটন কর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্টেটের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিজেও নীলাচল, মেঘলা পর্যটন স্পটগুলো পরিদর্শন করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় বান্দরবান অন্যতম। এখানে পর্যটকদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। পর্যটনকে বান্দরবান ব্যান্ডিং করা হচ্ছে। পর্যটন স্পটগুলোর নিয়মিতই উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। দর্শণীয় স্থানগুলোকে পর্যটক বান্ধব গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানের ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, পর্যটকে মূখর নাইক্ষ্যংছড়ির পর্যটক স্পটগুলো। উপজেলা সদরের উপকন্ঠে অবস্থিত উপবন পর্যটন লেকটিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম হয়েছে এ বছর। দীর্ঘ ২ বছর করোনা মহামারির বন্ধের পর এবার পর্যটকরা ছুটে এসছেন পাহাড়ি কন্যা নাইক্ষ্যংছড়ির রূপ দেখতে। যা এ যাবৎ কালের জন্যে সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হোসেন আহমদ জানান, ঈদের দিন থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি নতুন রূপে জেগে ওঠেছে। ঈদের পর অন্তত ২০ হাজার পর্যটক নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকটি পযর্টন স্পটে ভিড় করছেন এ সময়ে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আনিস মাহমুদ, ফারহানা জামান ও রুসাইবা জামান বলেন, পাহাড় এতো সুন্দর কল্পনাও করা যায় না। পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য, লেকের টিলার উপর স্থাপিত ওয়াচ টাওয়ার পুরো পাহাড়ের প্রকৃতির লীলাখেলা অবলোকন করা যায়। অপরূপে ভরা পুরো পাহাড়। তারা আরো বলেন, পাশাপাশি ঝুলন্ত সেতু আরো মনোমুগ্ধকর। আর লেকটিতে স্বপ্নীল ডিঙ্গি নৌকার ঢেউ খেলার দৃশ্য সবার আকর্ষণ কেড়ে নেয় অন্যভাবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহাকারি কমিশনার (ভূমি) জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি মাত্র পর্যটন স্পট আছে, তা হলো উপবন পর্যটন স্পটটি। তিনদিনে অনেক লোক এখানে এসেছে। এদের বিষয়ে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নানাভাবে তিনি জেনেছেন এ যাবৎ কালে এ বছরই বেশি পর্যটক নাইক্ষ্যংছড়ি এসেছেন।