মেঘ-পাহাড়ে মিতালি

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৯ মে, ২০২২ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা। পাহাড়, নদী, লেক এবং অনেকগুলো ছড়া প্রবাহিত হয়েছে এই উপজেলার কোলজুড়ে। প্রকৃতি যেন আপন মাধুরিতে সাজিয়েছে এই উপজেলাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে এই উপজেলার।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিলাইছড়িতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে কাপ্তাই লেকের মনোরম সৌন্দর্য দেখে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারে কল্পনার রাজ্যে। এখানে বসে সূর্যোদয়ের অপরুপ দৃশ্য এবং বর্ণিল আকাশে অস্তমিত সূর্যের নিদারুণ ক্যানভাস দেখার সুযোগ রয়েছে। এই উপজেলায় রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য ঝর্ণা। তৎমধ্যে ধুপপানি ঝর্ণা যেন প্রকৃতির এক অপরুপ সৃষ্টি। এই ছাড়া মুপ্পোছড়া ঝর্ণা, কাটা ছড়া ঝর্ণা, গাছকাটা ঝর্ণা দেখতে শত শত পর্যটক ভিড় করে এখানে। তবে রাত্রি যাপনের জন্য এখানে ভালো কোনো ব্যবস্থা ছিলো না এতদিন। তাই বিলাইছড়ি উপজেলার বিদায়ী নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরীর উদ্যোগে এবং এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন হিলটপে উদ্বোধন করা হয়েছে নীলাদ্রি রিসোর্ট ও শিশু পার্ক। এছাড়া রিসোর্ট সংলগ্ন উপজেলা ক্যাফেতে আগত পর্যটকদের জন্য ঘরোয়া পরিবেশে উন্নতমানের খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। নীলাদ্রি রিসোর্টে রয়েছে ৫টি উন্নত মানের কটেজ। কটেজগুলোর নামকরণ করা হয়েছে উপজেলায় অবস্থিত ঝর্ণা এবং নদীর নামকরণ অনুযায়ী। রিসোর্টে প্রবেশের মুখে ঝুলন্ত ব্রিজ এবং রিসোর্টের কেন্দ্রে পাহাড়ের ঘাঁ ঘেঁষে তৈরী করা হয়েছে মাচাং। যেখানে বসে দূর পাহাড়ের মেঘের ছটা, পূর্ণিমার আলো অবলোকন করতে পারছেন পর্যটকরা। এছাড়া রোদ বৃষ্টির ছোঁয়ায় বর্ণালী রামধনু দেখতে পাওয়া যায় এখানে বসে। বর্তমানে আরোও ১টি কটেজ নির্মাণাধীন আছে। সকল শ্রেণীর পর্যটকদের কথা চিন্তা করে প্রতিটি কটেজ ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থার মাধ্যমে এই উপজেলাকে ব্র্যান্ডিং করা, এলাকার জনসাধারণের বিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং সার্বিকভাবে এলাকার আত্মসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার অংশ হিসাবে নীলাদ্রি রিসোর্ট ও শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরোও জানান, ইতিমধ্যে এখানে শত শত পর্যটক এসে রাত্রিযাপন করেছেন। বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিরোত্তম তনচংগ্যা জানান, বিলাইছড়িতে বেড়াতে এলে পর্যটকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় রাত্রিযাপন। তাই উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসনের উন্নয়ন তহবিল হতে ২০২০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে এই কটেজ।

বিলাইছড়ি উপজেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এই এলাকার অধিবাসী বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পি জানান, বিলাইছড়ি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে এই রিসোর্ট এবং শিশু পার্ক নির্মাণের ফলে প্রতিদিন বিকেল বেলা এলাকার শিশুরা মুক্ত বাতাসে বেড়াতে চিত্ত বিনোদনের সুযোগ পেয়েছে। রিসোর্টে সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, রাঙামাটি জেলা প্রশাসকসহ অনেক ভিভিআইপি মেহমান রাত্রিযাপন করছেন। তাদের সম্মানে এখানে মাচাং ঘরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষ্টি, সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।

রাঙ্গুনিয়া থেকে বিলাইছড়ি বেড়াতে এসেছেন ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম সিকদার। তিনি বলেন, প্রকৃতি মাঝে ২/১ দিন সময় কাটানোর জন্য এই রিসোর্ট একটি আর্দশ স্থান। এইখানে পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের হাতছানি যেন এক অনাবিল সুখ। সরকার যদি বিলাইছড়ির পর্যটন খাতে ব্যয় করে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাটি যদি আরেকটু উন্নতমানের করে তবে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে পরিণত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন ছিনতাইকারীকে ১৭ ও মুদি দোকানিকে ১০ বছরের জেল
পরবর্তী নিবন্ধমায়ের সাথে অভিমান করে গার্মেন্টস কর্মীর গলায় ফাঁস