‘তোমায় যদি কাছে পেতাম মা/ মিটে যেত মনের যত ঘা’। মা শব্দটির মাঝে লুকিয়ে আছে অনাবিল শান্তি, অদ্ভুত পরিতৃপ্তি। কাহলিল জিবরান বলেছেন, ‘মা মানবজাতির ঠোঁটের সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ শব্দ’। বিধাতা মাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সকল গুণাগুণ দিয়ে। মা হলেন পালক, রক্ষক, শিক্ষক, চিকিৎসক, শুভচিন্তক, বিপদনাশক, দূরদর্শী। এককথায় সকল সমস্যার সমাধানই হলেন মা। এই পৃথিবীতে সবাই আমাদের ভালোবাসবে তবে সে ভালোবাসার মধ্যে কোনো প্রয়োজন লুকিয়ে থাকে। একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রয়োজন ছাড়াই আমাদের ভালোবাসেন তিনিই হলেন ‘মা’। পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে তার মধ্যে যে সম্পর্ক সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে তা হলো মা– সন্তানের সম্পর্ক। পৃথিবীর আলো দেখানো থেকে শুরু করে সারাজীবনের জন্য মা সন্তানকে আগলে রাখেন।
মনে রাখা প্রয়োজন মৃত্যুর অনেক পথ আছে, যে কোনো পথে মৃত্যু এসে হাজির হবেই, কিন্তু জন্মের পথ শুধুই মা। ঈশ্বর মাকে এমনভাবে তৈরি করে দিয়েছেন, যেন মাকে স্পর্শ করলেই ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায়। গভীর ভালোবাসা কিংবা দুঃখই হোক যাকে জড়িয়ে ধরলে পরম তৃপ্তি ও শান্তি পাওয়া যায়, তিনিই হলেন মা। জড়িয়ে ধরলে যিনি কখনোই রাগ করেন না, কষ্ট দিলে কখনোই ছেড়ে যান না, বিপদ বুঝে কখনোই সরে পড়েন না বরং পাখির ডানার মত আগলে রাখেন বুকে, তিনিই তো মা। একমাত্র মাতৃহারা সন্তানই বোঝেন মায়ের অভাব। মৃত্যু যন্ত্রণা যত কঠিন তার চেয়েও বড় কঠিন মা হারানোর বেদনা। সন্তান মাকে যতই কষ্ট দিক না কেন মা সেই কষ্টকে ভালোবাসা দিয়ে পূরণ করে দেন। মায়ের কোল যে কত বড় জিনিস, যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ বোঝে না।
মাকে অবহেলা করা সবচেয়ে মহাপাপ। বৃদ্ধাশ্রমে মাকে রাখা তার মানে এই নয় যে, সেই মায়ের ভাগ্য খারাপ। আসলে সেই সন্তানের ভাগ্য খারাপ যে নিজের ঘরে মাকে শেষদিন পর্যন্ত রাখতে পারে না। সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় যারা ঘরে এসে মাকে ডাকতে পারেন, মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারেন, মাকে জড়িয়ে ধরে গল্প বলতে পারেন, সে সন্তানেরাই ভাগ্যবান। যাদের মা নেই, তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার কেউ নেই। ঘর, সংসার, সন্তান, আত্মীয়, বন্ধু সবই যেন ক্ষণিকের মায়া। মায়ের ভালোবাসার মত চিরস্থায়ী আর কিছুই নেই। আমরা আমৃত্যু মাকে ভালোবেসে যাব। সুখে দুঃখে, হাসি কান্নায়, বিপদে মা–ই একমাত্র ভরসার স্থল। এই সত্য আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। তবেই পৃথিবীর সব মায়েরা, তাদের সন্তানেরা ভালো থাকবে।