মৃত্যুময় প্রতিক্ষণ

ঝুমি বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ

শুধু শরীর থেকে আত্মাটা বেরিয়ে গেলেই যে মানুষের মৃত্যু ঘটে তা নয়। মৃত্যুটা ভিন্নরূপে, ভিন্ন কারণেও প্রতিনিয়ত আমাদের মাঝে ঘটে। তার মধ্যে এমন কিছু মৃত্যু আছে যা ঘটে কেবল মনের। কিছু ঘটে আবেগের, কিছু বিশ্বাসের, কিছু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে না পেরে বারবার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মৃত্যু।এভাবে মনুষ্যত্বহীন, পাষণ্ড কিছু অমানুষের জন্যেও দিনের পর দিন অনেকের মৃত্যু ঘটে নিঃশব্দে, নিভৃতে। সেটা কেবল নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার মৃত্যু।

কেউ মৃত্যুকে হাসি মুখে মেনে নেয় আবার কারো অনিচ্ছা সত্বেও পৃথিবীকে বিদায় জানাতে হয়। মৃত্যুর মতো চিরন্তন সত্য পৃথিবীতে আর কিছু নেই। জন্মের পর থেকেই মানুষের ছায়া হয়ে থাকে এই মৃত্যু। কখন, কার মৃত্যু কিভাবে ঘটবে তা কেউ বলতে পারেনা। আজ প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছি, কথা বলছি, প্রাণ খুলে হাসছি। হয়তো দেখব ক্ষণিক পরেই নিঃশ্বাসটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। তখন চারটা প্রদীপ থেকে নিভে যাওয়া প্রদীপটি সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হলে বাকি তিনটে প্রদীপ তাদের নিয়মেই জ্বলবে। তারাও জ্বলতে জ্বলতে একসময় হয়তো নিঃশেষ হবে নয়তো মাঝপথেই একটা না একটা নিভে যাবে।এটাই হলো জীবন। আর এটাই সবার নিয়তি। সুন্দরতম পৃথিবীর সবকিছুই সুন্দর। অনন্য, অসাধারণ। প্রকৃতির গাছপালা থেকে শুরু করে দূর্বাঘাসটিও মাঝে মাঝে প্রকৃতিকে অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী করে তোলে। মানুষও তেমন।

আমরা চাইলেই জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তুলতে পারি আবার চাইলেই জীবনটাকে বিষাক্ত সাপের মতো বিষময়ও করতে পারি।এটা একান্তই আমাদের। জন্ম না হলে হয়তো বুঝতাম না মৃত্যুর স্বাদ কেমন। মাঝে মাঝে জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলোও বুঝিয়ে দেয় মৃত্যু না থাকলে হয়তো একে একে সব মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতো। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে মৃত্যুকে মেনে নিতে হয়। মৃত্যুর পর কোথায় যাব, কি করব তা কেউ জানি না। মৃত্যুর পর আদৌও কোন জীবন আছে বলে আমার মনেও হয় না। তাই যতদিন বেঁচে আছি জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করেই বাঁচতে চাই।যারা বোকা, কাপুরুষ তারাই কেবল আত্মহননের মতো জঘন্য পথ বেছে নেয়। জীবন হলো সৃষ্টিকর্তার এক আশ্চর্য উপহার। তোমরা সৃষ্টিকর্তার এই সুন্দর উপহারকে বিষন্নতায়,একাকীত্ব আর হতাশায় না ডুবিয়ে যতদিন বেঁচে থাকা যায় ততদিন সুন্দরভাবে থেকো, আনন্দে থেকো। দেখবে মৃত্যুটাও একদিন তোমার কাছে পরম বন্ধু হয়ে যাবে। যখন আসবে তখন তুমিও চোখে খানিকটা জল আর মুখে মৃদু হাসি নিয়ে বন্ধুকে আলিঙ্গন করবে। আর এটাই হলো জীবনের সার্থকতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্বে
পরবর্তী নিবন্ধশাহসুফি সৈয়দ মুহাম্মদ মঈজুদ্দিন আল ফারুকী (ক.)